অতিমারীর সময়ে অতিরিক্ত অলস অর্থ এবং সমসাময়িক বিনিয়োগের ঘাটতির কারণে দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলো তারল্যের আধিক্য নিয়ে সংশয়ে পড়েছে, বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়।
তারা বলেন যে কোভিড-১৯ অতিমারীর কারণে নতুন বিনিয়োগ তৈরি হচ্ছে না, যার ফলে শরীয়তভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে চলেছে।
উর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, সাধারণ ব্যাংকগুলোর মতো বিনিয়োগ সুযোগ না থাকা এই ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ।
তারা ব্যাখ্যা করেন, উচ্চ পরিমাণ উদ্বৃত্ত তহবিলের ফলে শরীয়তভিত্তিক আর্থিক মধ্যস্থতাকারীদের লাভজনকতা কমে যাচ্ছে।
তারা চান, নীতিনির্ধারকেরা যেন সুকুকের মতো উদ্ভাবনীয় আর্থিক নিরাপত্তার মাধ্যমে শুধু ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য বিনিয়োগ সুযোগ তৈরি করেন।
এখন ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের অতিরিক্ত নগদ তহবিল বাংলাদেশ সরকার ইসলামি বিনিয়োগ বন্ডে (বিজিআইআইবি) বিনিয়োগ করছে।
বর্তমানে ত্রৈমাসিক বিজিআইআইবি এবং ষাণ্মাসিক বিজিআইআইবি- এই বন্ড দু’টি চালু আছে।
“তবে এই বিনিয়োগ থেকে লাভ হয় সামান্য”, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে জানান প্রসিদ্ধ একটি ইসলামী ব্যাংকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
স্বাভাবিকভাবেই ধর্মীয় বিধি-নিষেধের কারণে ইসলামী ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই) ট্রেজারি বিলের নিলামে অংশ নিতে পারে না এবং সুদসহ সরকারি বন্ড ক্রয় করতে পারে না।
শরীয়তের বিধি মোতাবেক কোনো ব্যক্তি অথবা প্রতিষ্ঠানকে সুদ দেওয়া বা তাদের কাছ থেকে সুদ গ্রহণ করা নিষিদ্ধ।
বিনিয়োগের চাহিদা কমে যাওয়ায় বর্তমান পঞ্জিকা বর্ষের দ্বিতীয় এক-চতুর্থাংশে ইসলামী ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ ২০ শতাংশ বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের জুনের শেষে উল্লিখিত খাতে অতিরিক্ত নগদের পরিমাণ ছিল ৩৬ হাজার ৩৬৫ কোটি, যা তিন মাস আগে ছিল ৩০ হাজার ৪০৯ কোটি।
১০টি ইসলামী ব্যাংক, সাধারণ ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং শাখা ও ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডোতে অতিরিক্ত অলস অর্থের পরিমাণ যথাক্রমে ৩১৬ হাজার ৫৬ কোটি টাকা, ২ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং ২৬ হাজার ৯ কোটি টাকা।
তারল্য সংকটের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “চলমান অতিমারীর কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির হ্রাস দেখা গেছে।”
এদিকে বাকি সব ব্যাংকও একই পরিস্থিতির শিকার। করোনাকালে যোগান ব্যবস্থায় সৃষ্ট ব্যাঘাতের কারণে ব্যাংকগুলোর পুঞ্জিভূত তারল্যের পরিমাণ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি, যা সর্বকালের রেকর্ড ছুঁয়েছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও কমে গেছে, জানিয়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের সাথে সম্প্রসারণমূলক আর্থিক নীতির প্রয়োগও এ খাতে তারল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
তারো আরো বলেন যে, ২০২০-২১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ রেমিট্যান্সের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে, যার দরুণ ব্যাংকিং খাতে তারল্য আধিক্য তৈরি হয়েছে।
চলতি বছরে জুনের শেষ পর্যন্ত দেশের সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের ১০ হাজার ৭৮৮টি শাখার মধ্যে ১ হাজার ৫৬৯টি শাখা পরিচালনা করছে ১০টি পূর্ণবর্ধিত ইসলামী ব্যাংক।
এছাড়াও দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতের অগ্রগতি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৮টি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৩৯টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা এবং ১৩টি সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের ১৯৪টি ইসলামী ব্যাংকিং উইন্ডো দেশে ইসলামী অর্থিক সেবা প্রদান করছে।
আমানতের গতিশীলতা বাড়াতে এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অর্থায়ন করতে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাত অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইসলামী অর্থনৈতিক খাতের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ইসলামী ব্যাংকিং খাতের দখলে রয়েছে পুরো ব্যাংকিং খাতের ২৭ শতাংশেরও বেশি শেয়ার।
ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক উল্লেখ করে, “সহায়ক নীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা হলে ইসলামী মূলধন বাজার, ইসলামী বিমা (তাকাফুল) ও মাইক্রোফাইন্যান্স খাতের মতো ইসলামী খাতের অন্যান্য বিভাগও ধারাক্রমে উন্নতি করবে।”