ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখায় সংঘটিত ঘটনার ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চিঠিতে ভল্টের টাকার অসংগতির ঘটনার তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তদন্তে কোনো কর্মকর্তার অপরাধ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ব্যাংকিং লেনদেনের সময় শেষে বিশেষ গ্রাহককে নগদ টাকা দেয়ার ঘটনা তদন্ত করতে কমিটি গঠন করেছে ইউনিয়ন ব্যাংক। কমিটিকে সাতদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনজন কর্মকর্তাকে শাখা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়ন ব্যাংকের গুলশান শাখার সন্ধ্যাকালীন ব্যাংকিং করার অনুমোদন ছিল না। তার পরও তারা বিশেষ একজন গ্রাহকের অনুরোধে ১৯ কোটি টাকার চেক রেখে ভল্ট থেকে টাকা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দলের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ার পর পরই গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে ডেবিট করে ভল্টের অর্থ সমন্বয় করা হয়েছে বলে আমরা জেনেছি। তার পরও এক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হওয়ায় ইউনিয়ন ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকের বক্তব্য জানার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
ইউনিয়ন ব্যাংক থেকেও ভল্টে নগদ অর্থের অসংগতির বিষয়ে একই ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবিএম মোকাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ একজন গ্রাহক গত রোববার তার ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে ব্যাংকিং লেনদেনের সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য গ্রাহকের বিশেষ প্রয়োজন ও ব্যাংকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে চেকের বিপরীতে ১৯ কোটি টাকা দেয়া হয়। সিদ্ধান্ত ছিল পরদিন সকালে লেনদেন চালু হলেই গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা ডেবিট করে ভল্টের অর্থ সমন্বয় করা হবে। কিন্তু সোমবার লেনদেন চালু হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শক দল শাখায় গিয়ে ভল্টের অর্থ গণনা করে। স্বাভাবিকভাবেই আগের দিন চেক জমা রেখে দেয়া অর্থ ঘাটতি পায়। পরিদর্শক দলের উপস্থিতিতেই সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা সমন্বয় করা হয়েছে।
এদিকে সোমবারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে গণমাধ্যমে একটি বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক। বিজ্ঞপ্তিতে ইউনিয়ন ব্যাংকের ভল্টে অর্থের গরমিল সম্পর্কিত যেসব সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
এতে বলা হয়, ১৯ সেপ্টেম্বর ব্যাংকিং লেনদেন শেষে শাখায় একজন গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহক নগদ টাকা নেয়ার জন্য উপস্থিত হন। গ্রাহকের গুরুত্ব এবং ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্ক বিবেচনা করে তার কাছ থেকে চেক জমা রেখে নগদ টাকা দেয়া হয়। পরদিন বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট টিমের উপস্থিতিতে গ্রাহকের চেক ডেবিট করে ওই টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কোনো অনিয়ম বা ব্যাংকের অর্থ হারানোর মতো কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তার পরও বিষয়টি যথাযথভাবে তদন্ত করার জন্য এরই মধ্যে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটির সঠিক তদন্তের জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটি এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে। কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।