ঢাকা শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
২০২০ সনে ব্যাংকের আয় কমেছে আড়াই হাজার কোটি টাকা
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৮-১৫ ২২:০১:৩২

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে পণ্য আমদানি-রফতানিতে প্রভাব পড়েছে। এতে বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেন কমেছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংকের নিট আয় বা প্রকৃত আয়ের ওপর। বিদায়ী বছরে (২০২০) ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আয় হয়েছে চার হাজার ৬৬০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরে ছিল ছয় হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এ সুবাদে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকের প্রকৃত আয় কমেছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ৩৩ দশমিক ২০ ভাগ।

বিদায়ী বছরের অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। করোনার কারণে প্রায় সব ধরনের বিনিয়োগ কমে গেছে। জুন শেষে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা এ যাবতকালের সর্বনিম্ন। অপরদিকে প্রায় সব ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে বিনিয়োগ চাহিদা কমে যাওয়ায় ঋণের সুদ হার ক্ষেত্রবিশেষ ৭ শতাংশেওর নিচেও নামিয়ে এনেছে কোনো কোনো ব্যাংক। এতে কমে গেছে সুদ আয়। কিন্তু আমানতের সুদ হার ৪ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনায় সুদ ব্যয়ও কমে গেছে গত এক বছরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুরোর সুদ আয় হয়েছে ৯০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে ছিল এক লাখ ১৭০ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে সুদ আয় কমেছে প্রায় সাড়ে ৯ শতাংশ।

অপরদিকে আমানতের সুদ হার সর্বনিম্ন পর্যায়ে নামিয়ে আনায় তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বা সুদ ব্যয়ও কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত এক বছরে আমানতের সুদ পরিশোধ করতে হয়েছে ৬৯ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরে ছিল ৬৯ হাজার ৮১০ কোটি টাকা।

বিনিয়োগ আয় থেকে আমানতের সুদ পরিশোধের পর গত বছরে ব্যাংকের প্রকৃত সুদ আয় হয়েছিল ২১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। যেখানে আগের বছরে ছিল ৩০ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। এক বছরে প্রকৃত বিনিয়োগ থেকে আয় কমেছে ২৯ দশমিক ১ শতাংশ। এ আয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে এলসি কমিশন, ট্রেজারি বিল ও বন্ডের সুদসহ অন্যান্য বিনিয়োগকৃত আয়। যেমন গত বছরে প্রকৃত সুদ আয়ের সাথে বিনিয়োগকৃত আয় (নন ইন্টারেস্ট ইনকাম) ৩৭ হাজার ৩০০ কোটি টাকা যুক্তি হওয়ায় মোট পরিচালন আয় হয় ৫৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরে ছিল ৬০ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। এতে এক বছরে পরিচালন আয় কমেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা, যা শতকরা প্রায় আড়াই ভাগ।

এদিকে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমলেও গত এক বছরে পরিচালন ব্যয় বেড়েছে প্রায় আড়াই শতাংশ। যেমন ২০১৯ সালে ব্যাংকিং খাতে পরিচালন ব্যয় ছিল ৩২ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা। এক বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে এ ব্যয় ৭৬০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ২৩০ কোটি টাকা।

গত এক বছরে ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা ছিল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা কমে যায়। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঋণ পরিশোধে শিথিলতা দেয়া হয়। বলা হয়, কোনো ঋণগ্রহীতা ঋণ পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না। এতে ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় ব্যাপক হারে কমে যায়। এতে বছরে শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমলেও পুঞ্জিভূত খেলাপি ঋণের কারণে প্রভিশন সংরক্ষণের হার বেড়ে যায়। একই সাথে পরিচালন মুনাফা থেকে পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ব্যাংকগুলোর সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত ব্যাংকের ৪০ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ও সরকারের ট্যাক্স পরিশোধের পর ব্যাংকের নিট আয় বা প্রকৃত আয় বছর শেষে আগের বছরের চেয়ে ৩৩ শতাংশ কমে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৯ সালে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আয় হয়েছিল ছয় হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। পরের বছরে (২০২০ সালে) দুই হাজার ৩২০ কোটি টাকা কমে হয় চার হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, চলতি বছরেও করোনার প্রভাব কমেনি, বরং বেড়েছে। এর ফলে বছর শেষে আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের প্রভাবে ব্যাংকের মুনাফা কমেছে
কৃত্রিম আয়ে দুর্বল হচ্ছে ব্যাংকের মূলধন ভিত্তি
অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে