আলোচিত বেসিক ব্যাংকের আত্মসাত হওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে কত টাকা উদ্ধার হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীকে এক সপ্তাহের মধ্যে লিখিতভাবে এই তথ্য জানাতে বলেছেন আদালত।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনায় করা পৃথক মামলায় এক আসামির জামিন আবেদনের শুনানিতে বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, পৃথক এই মামলায় নিম্ন আদালতে জামিন না পেয়ে হাইকোর্টের দারস্থ হন ব্যাংকটির শান্তিনগর শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আলী চৌধুরী। তার জামিন আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল দেন। এই ব্যাংকারের বিরুদ্ধে ৭ মামলায় তার জামিন প্রশ্নে রুল শুনানির জন্য এদিন পৃথক সাতটি আবেদন হাইকোর্টের কার্যতালিকায় ওঠে।
সাতটির মধ্যে দুই মামলায় মোহাম্মদ আলীকে জামিন দিয়ে অপর পাঁচ মামলায় জামিন আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহ মুলতবি করে পরবর্তী শুনানির জন্য ১৮ আগস্ট দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সগীর হোসেন। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের গুলশান, দিলকুশা ও শান্তিনগর শাখা থেকে মোট সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের মাধ্যমে বিতরণের অভিযোগ ওঠার পর অনুসন্ধানে মাঠে নামে দুদক। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া, জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণদানসহ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধেও।
প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে এই অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে দুদক। আসামিদের মধ্যে ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা এবং বাকিরা ঋণ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক জরিপ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত। তবে আসামির তালিকায় বাচ্চু বা ব্যাংকটির তৎকালীন পরিচালনা পর্ষদের কেউ না থাকায় দুদকের ওই মামলা নিয়ে প্রথমেই প্রশ্ন ওঠে। সেই প্রশ্নের মীমাংসা কবে হবে-সেটা এখনো অজানা।
তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকের নিয়োগ করা নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অনিয়মিত ঋণ মঞ্জুর, নিয়োগ ও পদোন্নতিতে পরিচালনা পর্ষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা ছিল।
বেসিক ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি অনুসন্ধান ও তদন্তসংশ্লিষ্ট দুদকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান জিজ্ঞাসাবাদে বলেছিলেন, সব ঋণ অনুমোদন নিয়মনীতির মধ্যে থেকেই করেছেন।
ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যাচাই-বাছাই শেষেই এসব ঋণ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঋণ অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তার দায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের। অভিযুক্তরা নিজেদের বাঁচাতে তাকে ‘সেফ গার্ড’ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।