ঢাকা রবিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৫
যমুনা ব্যাংকে ছাঁটাই আতঙ্ক !!
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৮-০১ ০২:২৯:৫০

অফিস চলাকালে হঠাৎ মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ (এইচআরডি) থেকে ফোন। ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে বলা হলো, ‘আপনাকে এক মাসের সময় দেয়া হলো, রিজাইন করেন। তা না হলে টার্মিনেট করা হবে। রিজাইন করলে আপনার পাওনাসহ সব সুবিধা, সঙ্গে তিন মাসের বেতন পাবেন। আর ব্যাংক থেকে টার্মিনেট করলে কিছুই পাবেন না।’

এমন ফোন পেয়ে অনেকে বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেছেন। আর যারা স্বেচ্ছায় ইস্তফা দিচ্ছেন না তাদের নানা রকম হয়রানির সঙ্গে সহ্য করতে হচ্ছে মানসিক নির্যাতন। করোনা মহামারির মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই বেসরকারি খাতের যমুনা ব্যাংকের বিরুদ্ধে এভাবে কর্মী ছাঁটাই বা পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে।

অকারণে ছাঁটাই করায় কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। সম্প্রতি এমন অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে একটি চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও অনুরোধ জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যমুনা ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রায় ১৫ বছর ধরে এ ব্যাংকে কর্মরত। কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। আর কয়েক বছর পর অবসরে যাব। হঠাৎ করে ব্যাংক পদত্যাগ করতে বলছে। কারণ কী, জানতে চাইলাম। বলল, আপনার পারফরমেন্স ভালো না। তাহলে এত দিন কীভাবে চাকরি করলাম? ২০ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে কোনো সমস্যা হলো না। এখন শেষ বয়সে এসে ব্যাংক বলছে, পারফরমেন্স ভালো না, পদত্যাগ করেন।’

তিনি আরও বলেন, তারা (ব্যাংক কর্তৃপক্ষ) কোনো লিখিত পত্র দেয়নি। ব্যক্তিগত মোবাইলে এইচআরডি থেকে মৌখিকভাবে বলেছে, পদত্যাগ করতে। করোনা মহামারির এ পরিস্থিতিতে চাকরি গেলে কী করে চলব?

তার অভিযোগ, ‘ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কয়েকজন পরিচালকের যোগসাজশে এ কাজ করা হয়েছে। নানা অজুহাতে তারা ছাঁটাই করছে। এর মূল কারণ, আমরা চলে গেলে কম টাকায় নতুন লোক নিয়োগ দেবে। এছাড়া তাদের পছন্দের লোক বসিয়ে এখান থেকে সুবিধা নেবে।’

ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করতে বলেছে— এমন আরেকজন সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসএভিপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা বলেন, ‘মে মাসে আমাকে এইচআরডি থেকে কল করে পদত্যাগ করতে বলল। কারণ জানতে চাইলে তারা কিছুই বলল না। শুধু বলল, রিজাইন করলে লাভ হবে, না করলে টার্মিনেট করা হবে। আমি বলেছি, লিখিতভাবে জানাতে হবে; বিনা কারণে আমি পদত্যাগ করব না।’

‘এরপর তারা আমার সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। মানসিকভাবেও চাপে রেখেছে। গত সপ্তাহে আবারও এইচআরডি থেকে কল করে জুলাই মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলে। এখন পর্যন্ত পদত্যাগপত্র জমা দিইনি।’

তিনি আরও বলেন, আমার যদি কোনো অপরাধ থাকত, আমি পদত্যাগ করতাম। কিন্তু বিনা দোষে কেন পদত্যাগ করব? বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি কই যাব? এখন নতুন চাকরিও পাওয়া সম্ভব নয়। শুধু আমি নই, অর্ধশতাধিক কর্মীর সঙ্গে এমন আচরণ করছে তারা।

যমুনা ব্যাংকের সিনিয়র এ কর্মকর্তা বলেন, ‘মহামারির এ সময়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ আসলেই অমানবিক। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’

স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করছে— এমন অভিযোগ তুলে যমুনা ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা গত ২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বরাবর চিঠি দেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, ‘বেশকিছু দিন যাবৎ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগের কতিপয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার ফোন করে নিজ ইচ্ছায় (স্ব-প্রণোদিত হয়ে) চাকরি থেকে দ্রুত সময়ের মধ্যে লিখিতভাবে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে আসছে। দেশের বর্তমান জাতীয় দুর্যোগের সময় মানুষের জীবন বাঁচানোই যখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে মানুষ যখন দিশেহারা, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ যখন একেবারেই নেই, সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থার নিয়োগ যখন পুরোপুরি বন্ধ, ঠিক তখনই ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় হতে বারবার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এভাবে চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা নিতান্তই অমানবিক।’

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় যেসব কর্মকর্তা নিজ ইচ্ছায় পদত্যাগ করছেন না তাদের প্রধান কার্যালয়ের মানবসম্পদ বিভাগে নিয়ে এসে উক্ত বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মানসিক চাপ এবং নানাবিধ ক্ষয়ক্ষতি ও হয়রানির হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

যমুনা ব্যাংকের এমন অন্যায় ও অমানবিক আচরণ বন্ধের দাবি জানিয়ে ভুক্তভোগী ব্যাংকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘যমুনা ব্যাংকের হয়রানিমূলক আচরণের সুষ্ঠু সমাধান চাই। মানবিক দিকসহ যৌক্তিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ব্যাংকিং খাতের অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক অতি-সত্তর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কাউকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করিনি। এ ধরনের অভিযোগ সত্য নয়। যারা এসব অভিযোগ করছে, তারা সঠিক কথা বলছে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘করোনাকে সামনে রেখে কোনো অবস্থায় খরচ কমানোর কথা বলে কর্মী ছাঁটাইয়ের অবকাশ নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি দেখব। তবে, যদি কোনো কর্মীর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ থাকে তাহলে ব্যাংক তার নিজস্ব নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।’

ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে
ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ আট কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’, ডিজিটাল ব্যাংক এখনই নয়: গভর্নর