চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালায় প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় সোনালী মুরগী, মহিষ ও গাড়ল পালনে ঋণ দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব ওয়েবসাইটে কৃষি ও পল্লী ঋণের নতুন এ নীতিমালা প্রকাশ করা হয়।
এবার কৃষি ও পল্লী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরে তুলনায় ৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ বেশি। এছাড়া কৃষি ঋণের সুদের হার ১ শতাংশ কমিয়ে ৮ শতাংশ করা হয়েছে।
নীতিমালায় বলা হয়, করোনা মহামারীর কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় এবং সরকারের কৃষি ও কৃষকবান্ধব নীতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের টেকসই উন্নয়নের নির্ধারিত লক্ষ্যের প্রথম ও প্রধান তিনটি লক্ষ্য তথা দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুধা মুক্তি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের উদ্দেশ্যে পল্লী অঞ্চলে পর্যাপ্ত কৃষি ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এবারের কৃষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা এবং বেসরকারী ও বিদেশী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ১৭ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তুলে জনসাধারণের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং কৃষকদের নিকট কৃষি ঋণ সহজলভ্য করার লক্ষ্যে নতুন নীতিমালায় বেশ কিছু সময়োপযোগী বিষয় যুক্ত করাহয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- প্রাণিসম্পদ খাতের পোল্ট্রি উপখাতের আওতায় সোনালী মুরগী পালনের জন্য ঋণ প্রদান এবং পশুসম্পদ উপখাতের আওতায় মহিষ ও গাড়ল পালনের জন্য ঋণ প্রদান। ফসলভিত্তিক ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ঋণসীমা কৃষকদের প্রকৃত চাহিদা ও বাস্তবতার নিরিখে ১৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া মৎস্য চাষের ঋণ নিয়মাচারে একর প্রতি ঋণ সীমাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের তদারকি অধিকতর জোরদার করণের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
গত অর্থবছরের কৃষি ও পল্লী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো বিতরণ করতে সক্ষম হয় ২৫ হাজার ৫১১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৯৭ দশমিক ০৩ শতাংশ। গত অর্থবছরে মোট ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ১৬৬ জন কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন, যার মধ্যে ব্যাংকগুলোর নিজস্ব নেটওয়ার্ক ও এমএফআই লিংকেজের মাধ্যমে ১৬ লাখ ৫ হাজার ৯৪৭ জন নারী প্রায় ৯ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। এছাড়া ২২ লাখ ৪৫ হাজার ৫১২ জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ১৭ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা এবং চর, হাওর প্রভৃতি অনগ্রসর এলাকার ৭ হাজার ৭৯৬ জন কৃষক প্রায় ৩৪ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ পেয়েছেন।
এদিকে করোনার কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে চলতি মূলধন ভিত্তিক কৃষি খাতে চলতি মূলধন সরবরাহের উদ্দ্যেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অর্থায়নে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি পুনঃঅর্থায়ন স্কীম গঠন করা হয়। এ স্কীমটির মেয়াদ জুন মাসে শেষ হয়েছে। এ স্কীমের আওতায় তফসিলি ব্যাংকগুলো কতৃক ৪ হাজার ২৯২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া সুদ-ক্ষতি সুবিধার আওতায় শস্য ও ফসল খাতে ব্যাংকগুলো কর্তৃক কৃষক পর্যায়ে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করা হয়, যার মেয়াদও ৩০ জুন মাসে সমাপ্ত হয়েছে। এর আওতায় ব্যাংকগুলো কর্তৃক জুন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।