ঢাকা শনিবার, এপ্রিল ২৭, ২০২৪
সরকারি ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ২২৬টি
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৭-২৬ ০৭:৪৩:৩১

ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমে এখন ২২৬টি। এক বছরের লোকসানি শাখা কমলেও এ ধরনের শাখার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকের । আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট লোকসানি শাখা কমেছে। গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর মোট লোকসানি শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২২৬টি। এর আগের অর্থবছর (২০১৯-২০) শেষে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার স্থিতি ছিল ২৮৯টি। এক বছরে ব্যাংকগুলোর মোট লোকসানি শাখা কমেছে ৬৩টি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সাথে সম্পাদিত ‘বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির’ (এপিএ) আওতায় গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে ছয় ব্যাংকের মোট লোকসানি শাখার স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২০টি। সে হিসাবে সার্বিকভাবে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চলাকালে ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ২০২০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের মার্চ মাস ধরে ঋণ পরিশোধের ওপর শিথিলতা দেয়। বলা হয়, এ সময়ে কোনো গ্রাহক ঋণ পরিশোধ না করলে তাকে খেলাপি করা যাবে না। এর ফলে ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা সুযোগ পেয়ে যান। তারা ঋণ পরিশোধ পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। আর যারা আগে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করতেন তাদের বেশির ভাগই ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেন। ফলে গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ ঋণ আদায় হয়নি বলেই চলে। ঋণ আদায় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর লোকসান হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়েছে উল্টো। কারণ নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ঋণ নিয়মিত থাকলে ওই ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয় না। যেহেতু ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা দেয়া হয়, সেজন্য ঋণ আদায় না করেও ব্যাংকগুলোর ঋণ নিয়মিত রয়ে যায়। আর নিয়মিত ঋণের ওপর অর্জিত সুদ আদায় না হলেও ব্যাংকগুলোর আয় খাতে নিতে কোনো বাধা থাকে না। অথচ, নীতিমালা শিথিলের আগে লোকসানি শাখাগুলোর খেলাপি ঋণের কারণে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হিমশিম খেতে হতো। এতে লোকসানি শাখা না কমে বরং বেড়ে যেত। কিন্তু গত দেড় বছর যাবৎ বিকল্পভাবে ঋণ নিয়মিত থাকায় এখন আর প্রভিশন সংরক্ষণের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। এভাবেই শাখাগুলোর কৃত্রিম আয় বেড়ে যাচ্ছে। আর এ আয়ের ওপর ভর করেই ব্যাংকগুলোর দীর্ঘ দিনের লোকসানি শাখার দুর্নাম থেকে বেরিয়ে এসে লাভজনক শাখার খাতায় নাম লেখাতে পারছে। এভাবেই সরকারি ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, গত অর্থবছরে দু’টি ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে এবং কমেছে চারটির। এর মধ্যে রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে ২১টি এবং বেসিক ব্যাংকের একটি লোকসানি শাখা বেড়েছে। বর্তমানে এ দু’টি ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৬টি ও ৩১টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ব্যাংক দু’টির লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৫টি ও ৩০টি।

অন্য দিকে গত অর্থবছরে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ১৪টি এবং জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ৩১টি কমেছে। তবে লোকসানি শাখা কমলেও বর্তমানে ব্যাংক দু’টিতে লোকসানি শাখার সংখ্যা সর্বাধিক। গত জুন শেষে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৬টি এবং জনতা ব্যাংকের ৫৫টি। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ৮৬টি এবং অগ্রণী ব্যাংকের ৭০টি ।

অবশিষ্ট দুই ব্যাংকের মধ্যে গত অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা কমেছে ২২টি এবং বিডিবিএলের ১৮টি। গত জুন শেষে এই দুই ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২৮টি ও ২০টি।

এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা ছিল ৫০টি এবং বিডিবিএলের ৩৮টি।

এদিকে ব্যাংকগুলো আগের তুলনায় লোকসানি শাখার স্থিতি কমিয়ে আনলেও চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার স্থিতি শিথিল করা হয়েছে। এপিএর আওতায় ২০২২ সালের জুন শেষে ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৭৫টি। অথচ বর্তমানে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার স্থিতি হচ্ছে ২২৬টি। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখার সংখ্যা ৪৯টি বাড়লেও সেটি লক্ষ্যমাত্রার ভেতরেই থাকবে। চলতি অর্থবছরে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ৫০টি। জনতা ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ৫৬টি। অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ৮০টি। রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ৫০টি। বেসিক ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ২৪টি। এবং বিডিবিএলের ব্যাংকের লোকসানি শাখার স্থিতি ১৫টির মধ্যে সীমিত রাখতে বলা হয়েছে।

এর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান কোভিডের কারণে সরকারি ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যার বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এসব শাখা স্থিতির সংখ্যা আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি।

রূপালী ব্যাংকে অফশোর ব্যাংকিং বিষয়ক সেমিনার
রাষ্টায়াত্ব ব্যাংকের শীর্ষকর্তাদের ১৬ শতাংশ নারী
সোনালী ব্যাংকের নতুন পদোন্নতির  নীতিমালা বাতিলে রুল