গত ৮ই জুলাই নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জন শ্রমিক নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবুল হাসেম ও তার চার ছেলেসহ ঊর্ধ্বতন ৮ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এ পরিস্থিতিতে সজীব গ্রুপকে দেয়া ২০০০ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীরা। কীভাবে ঋণের অর্থ আদায় করবেন এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের মামলায় আসামিদের মধ্যে আছেন হাসেমের ৪ ছেলে। তারা কোম্পানির পরিচালক। তারা হলেন- হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম ও তানজিম ইব্রাহীম।
জানা গেছে, সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবুল হাসেমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলায়। ১৯৮২ সালে পাকিস্তানের সেজান জুস আমদানির মধ্য দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন আবুল হাসেম।
পরবর্তীতে সেজান জুসসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের উৎপাদনে আসে তার কোম্পানি। সজীব গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- সজীব করপোরেশন, হাসেম ফুডস লিমিটেড, হাসেম অটো রাইস মিলস, সজীব ফুডস অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড, হাসেম অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেড, তাকাফুল ইসলামী বীমা লিমিটেড, হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেড, সজীব হোমস লিমিটেড, মারস ইন্টারন্যাশনাল, সজীব লজিস্টিকস ও স্যাভি ফুডস। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রুপটি নিয়েছে মোটা অঙ্কের ঋণ।
বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, এক দশক আগেও গ্রুপটির আকার ছিল ৫০০ কোটি টাকার মতো। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রুপটির ১১ প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৯৯৩ কোটি টাকা ঋণ ছিল হাসেম ফুডস লিমিটেডের নামে।
বিভিন্ন ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সজীব গ্রুপের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সজীব করপোরেশনের নামে ঋণ আছে ৩৬০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় রাজধানীর ফার্মগেটে। আর হাসেম রাইস মিলস লিমিটেডের নামে ব্যাংকঋণ আছে ৩৩৮ কোটি টাকা। চাল উৎপাদনের এ মিলের অবস্থান রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায়। এ ছাড়া হাসেম ফ্লাওয়ার মিলস লিমিটেডের নামে ২০১ কোটি, সজীব লজিস্টিকস লিমিটেডের নামে ৩৮ কোটি, সজীব হোমস লিমিটেডের নামে ২৯ কোটি, হাসেম অ্যাগ্রো প্রসেসিং লিমিটেডের নামে ২০ কোটি, হাসেম অটো রাইস মিলের নামে ৮ কোটি, স্যাভি ফুডস লিমিটেডের নামে ৩ কোটি এবং মারস ইন্টারন্যাশনালের নামে ২১ লাখ টাকার ব্যাংকঋণ রয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রুপটি ঋণ রিসিডিউল করেছে। তবে এরপর থেকে নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকেও ঋণ আছে সজীব গ্রুপের। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মো. আনিসুর রহমান বলেন, বেসিক ব্যাংকে ৮ কোটি টাকার ঋণ আছে। অগ্নিকাণ্ডের পর তাদের কারখানায় আমাদের শাখা ম্যানেজার গিয়েছিলেন। ঋণের বিপরীতে আমাদের বীমা করা আছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো।