টাঙ্গাইলে গ্রাহকের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকিং বুথের এজেন্ট সারোয়ার হোসেন সবুজ। তিনি বাসাইল উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের আইসড়া গ্রামের মারিফত মিয়ার ছেলে ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি। এ ঘটনায় গতকাল গ্রাহকরা টাকা ফেরতের দাবিতে বাসাইলের আইসড়া বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ ঘেরাও করে মিছিল-সমাবেশ করেছেন।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, তিন বছর আগে আইসড়া বাজারে ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং বুথ চালু হয়। বাসাইলের ফুলকী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সবুজ এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন। বাজারে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করেন। ব্যাংকিং নীতিমালা উপেক্ষা করে উচ্চ হারে রেটের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে স্থানীয়দের প্রলুব্ধ করেন সবুজ। অতি মুনাফার আশায় গ্রামের সরল অনেক মানুষ বিদেশ থেকে পাঠানো টাকা ও বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে টাকা জমা রাখেন। সম্প্রতি জমাকৃত টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তাদের জমানো টাকা ব্যাংক হিসাবে নেই। এজেন্ট সবুজের কাছে টাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিভিন্ন গ্রাহককে টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়ে টালবাহানা করেন। টাকা না পেয়ে গ্রাহকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাদের জমানো টাকা পাওয়ার আশায় বাজারে সালিশি বৈঠক বসান। সেখানে সবুজ টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। হঠাৎ করে গত সাতদিন ধরে সবুজ বুথ বন্ধ করে পালিয়ে যান।
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগে জানা গেছে, গ্রাহক রুম্পা বেগমের ১৪ লাখ টাকা, আফজাল হোসেনের ৯ লাখ টাকা, রাজু বেগমের ৭ লাখ টাকা, জলি বেগমের পৌনে ৪ লাখ টাকা, বাজারের চা বিক্রেতা আবুল হোসেনের ১ লাখ টাকা, ইতি খানের ৪০ হাজার টাকাসহ অসংখ্য গ্রাহকের প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে এজেন্ট সবুজ।
ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক ও দোকান ব্যবসায়ী রাজু বলেন, আমিও ৫ লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছি। ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংক টাঙ্গাইল অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এর পেছনে জড়িত রয়েছে। তা নাহলে সবুজ এই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস পেত না। আত্মসাতের সঙ্গে জড়িতদের বিচার ও টাকা ফেরতের দাবি জানান তিনি।
ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে গত তিনদিন আগে আইসড়া বাজারের সব গ্রাহক, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বাজার কমিটির নেতারা এবং পলাতক এজেন্ট সবুজের বাবাকে নিয়ে সালিশি বৈঠকে বসা হয়। সবুজের বাবা তার সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা পরিশোধে রাজি হন। সবার উপস্থিতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের হিসাবের ভিত্তিতে টাকা পরিশোধ করা হবে বলেও জানান তিনি।
বাসাইল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কামরান খান বিপুল বলেন, এ ঘটনায় তাকে পদ থেকে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
টাঙ্গাইল ডাচ্-বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং অফিসের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ বলেন, এ ঘটনা নিয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ একটি মিটিং করেছে। স্থানীয় পর্যায়ের লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।