২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে পাচার করে সুইস ব্যাংকে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্র্যাংক রেখেছেন বাংলাদেশিরা। প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯২ টাকা করে ধরলে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ হাজার ১৭৯ কোটি টাকার বেশি হয়।
এর আগের বছর ২০১৯ সালে এই টাকার পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত বছরের চেয়ে এ বছর সুইস ব্যাংকের টাকা রাখার পরিমাণ কমেছে। পাচার হওয়ার টাকা বাংলাদেশের অন্তত ১০টি বেসরকারি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কারা এসব টাকা জমা করেছেন তার তথ্য প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেই।
সুইস ব্যাংক মূলত সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) সুইজারল্যান্ড সরকারের স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিশেষ আইন দ্বারা পরিচালিত এ ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণ সবই স্বাধীন।
প্রতিবেদন অনুসারে, সুইস ব্যাংকে সবেচেয়ে বেশি আমানত রেখেছে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা। সেই দেশের নাগরিকরা ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে ৩৭ হাজার ২৬২ কোটি ফ্র্যাংক আমানত রেখেছেন। এরপরের স্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। দেশটির নাগরিকরা ১৫ হাজার ১৪৩ কোটি ফ্রাংক আমানত রেখেছেন। এরপর যথাক্রমে সিঙ্গাপুরের ৪ হাজার ৯৮২ কোটি, চীনের ১ হাজার ৩৭৪ কোটি ফ্র্যাংক, রাশিয়ার ১ হাজার ৫০৩ কোটি, সৌদি আরবের ১ কোটি ৩২ ফ্র্যাংক, থাইল্যাণ্ডের ৩৮৬ কোটি, তাইওয়ানের ১ হাজার ২২ কোটি, জাপানের ২ হাজার ২১২ কোটি, তুরস্কের ৭২৪ কোটি ও মালয়েশিয়ার নাগরিকদের ২৫২ কোটি ফ্র্যাংক জমা রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তানের আমানত প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬৪ কোটি ফ্র্যাংক হয়েছে। গত বছর ছিল ৩৫ কোটি।
ভারতীয়দের জমা করা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে প্রায় আড়াইগুণ বেড়ে ২৫৫ কোটিতে উন্নীত হয়েছে। গত বছর ছিল ৮৯ কোটি ২০ লাখ। এছাড়াও নেপালের ১৭ কোটি থেকে বেড়ে ৩৬ কোটি, আফগানিস্তানের ৫ কোটি, ভুটানের ২৫ লাখ, শ্রীলংকার ১৩ কোটি ৩১ লাখ ও মিয়ানমারের ৩৯ লাখ ফ্র্যাংক আমানত রয়েছে। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।
অন্যদিকে গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের প্রায় সমান। একক বছর হিসাবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ১ হাজার ১৫১ কোটি ডলার। দেশীয় মুদ্রায় যা প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ পরিমাণ অর্থ দিয়ে ৪টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব।
জিএফআইর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার প্রক্রিয়ায় অর্থপাচার হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি মূল্য বেশি দেখানো (ওভার ইনভয়েসিং), রফতানিতে মূল্য কম দেখানো (আন্ডার ইনভয়েসিং), হুন্ডি ও অন্য মাধ্যমে বিদেশে লেনদেন এবং ভিওআইপি ব্যবসা।