বিশ্বের ১৪০টি দেশের বিনিয়োগের অন্যতম গন্তব্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে ভিয়েতনাম। দেশটির পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যমতে, ভিয়েতনাম এরই মধ্যে ৩৯ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের নিবন্ধিত মূলধনের প্রায় ৩৩ হাজার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) প্রকল্পকে আকৃষ্ট করেছে। খবর ভিয়েতনাম টাইমস।
ভিয়েতনামের পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী নুয়েন থি বিচ নগ বলেন, কভিড-১৯-এর প্রভাব সত্ত্বেও ভিয়েতনাম সফলভাবেই তার মহামারী প্রতিরোধ কার্যক্রম এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ২ দশমিক ৯১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে গত বছর ইতিবাচক জিডিপি হারের মধ্যে বিশ্বের কয়েকটি দেশের অন্যতম ছিল ভিয়েতনাম।
নুয়েন থি বিচ নগ বলেন, গত বছর এবং চলতি বছরের প্রথম চার মাসে ভিয়েতনামের সামষ্টিক অর্থনীতি স্বাভাবিক ছিল। একই সঙ্গে চলতি বছর ভিয়েতনামের জিডিপি আনুমানিক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানান নুয়েন থি বিচ নগ।
বিশ্বব্যাপী সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের হার এখনো কভিড-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে না এলেও ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে এ হার তুলনামূলকভাবে ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। একই সঙ্গে দেশটিতে চলতি বছরের প্রথম চার মাসে সম্পূর্ণ নতুন এবং অতিরিক্ত নিবন্ধনকৃত মূলধন, মূলধন অবদান এবং শেয়ার বিক্রয় বেড়ে ১ হাজার ২২৫ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। দেখা যায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম চার মাস দেশটিতে নতুন নিবন্ধনকৃত মূলধনের উপস্থিতি বৃদ্ধি পায় ২৪ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত।
ভিয়েতনামের সাধারণ পরিসংখ্যান দপ্তরের (জিএসও) দেয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, বর্তমানে উচ্চমানসম্পন্ন এফডিআই প্রবাহের জন্য নিরাপদ স্থান হিসেবে ভিয়েতনামের অবস্থান বেশ প্রশংসাযোগ্য। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসার একটি উল্লেখযোগ্য অংশই বর্তমানে চীনের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে এবং নিজেদের সরবরাহ নীতিতে বৈচিত্র্য আনতে স্থানীয়ভাবে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছে। এমন অবস্থায় কভিডকালীন স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতি ধরে রাখার ফলে ভিয়েতনাম এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়ীদের কাছে একটি নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠছে। জিএসওর এক বিশ্লেষণে এমনটা উঠে আসে বলে জানায় ভিওভি।
বর্তমানে ভিয়েতমানের উত্তর প্রদেশে ইলেকট্রনিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফক্সকনের একটি উৎপাদন কারখানা নির্মাণাধীন অবস্থা রয়েছে, যা চলতি বছরের প্রথমার্ধেই কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশটির পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত এক তথ্যে জানা যায়, তাইওয়ানভিত্তিক ইলেকট্রনিক পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান পেগাট্রন ভিয়েতনামে একটি উৎপাদান কারখানা প্রতিষ্ঠায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে। চলতি বছর এ রকম আরো বেশ কয়েকটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ আসতে পারে দেশটিতে এমনটা ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে ভিয়েতনাম দেশটিতে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একদল প্রশিক্ষিত কর্মী বাহিনী তৈরি করেছে। ফলে বিভিন্ন বহুজাতিক করপোরেশন ও বিদেশী উদ্যোক্তারা দেশটির প্রতি আরো আগ্রহী হয়ে উঠছেন। পাশাপাশি দেশটির সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতাবস্থার কারণেও দেশটিতে বিনিয়োগের আগ্রহ পাচ্ছে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো, যা দেশটিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীতির জন্য একটি চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করছে। একই সঙ্গে স্থানীয় বিনিয়োগ পরিবেশের অনুকূলে বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে শক্তিশালী করে তুলছে।
চলতি বছরের শুরুতে দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, চীন ও ভারতকে পিছু হটিয়ে এশিয়ায় এফডিআইয়ের একটি নির্ভরযোগ্য লক্ষ্য হিসেবে ভিয়েতনাম জায়গা করে নিয়েছে।