বেসরকারি চাকরিজীবী মোসলেম উদ্দিন তরমুজ কিনেছেন। বাসায় নিয়ে কাটার পর দেখলেন ভেতরটা টকটকে লাল। বেশ মিষ্টিও। কিন্তু খাওয়ার পর দেখা গেলো তিনি ছাড়া পরিবারের বাকি তিন সদস্যের একযোগে পেট খারাপ। তিনি ধরেই নিলেন, তরমুজে কিছু মেশানো ছিল।
তরমুজে কি সত্যিই কিছু মেশানো সম্ভব? জানতে চাইলে মিরপুর মাজার রোডের এক ব্যবসায়ী জানান, ‘হাজার হাজার তরমুজে সিরিঞ্জ দিয়ে কখন কী মেশাবো বলেন? এটা কি সম্ভব?’
প্রচণ্ড গরমে কিংবা সারা দিন রোজা রাখার পর শরীরে পানির ঘাতটি মেটাতে অনেকেই মৌসুমি ফল তরমুজকেই বেছে নেন। তবে এই তরমুজ খাওয়ার পর অনেকেরই শুরু হয় পেটে গণ্ডগোল। তাতেই সন্দেহ জাগে, তরমুজে কী কিছু ইনজেকশন দিয়ে পুশ করা হচ্ছে?
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ বলছে এ কাজ অসম্ভব। কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, টনে টনে আসা তরমুজে একটা একটা করে সিরিঞ্জ দিয়ে কিছু পুশ করা দারুণ কঠিন কাজ। চিকিৎসকরা বলছেন, তরমুজের ভেতরে যেসব উপাদান থাকে তা সবার পাকস্থলীতে হজম না-ও হতে পারে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ মনে করে, সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজে কিছু প্রবেশ করানো আদৌ সম্ভব নয়। সংস্থাটির সদস্য মঞ্জুর মোরশেদ আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি ভ্রান্ত ধারণা। সিরিঞ্জ দিয়ে তরমুজে রঙ প্রবেশ করানো যাবে না। ঢোকাতে গেলেও বের হয়ে চলে আসবে। কারণ, তরমুজের ভেতর একটা চাপ থাকে (কমপ্যাক্ট প্রেসার)। আবার কিছু প্রবেশ করিয়ে তো তরমুজের চেহারা বদলানো যাচ্ছে না। আকারে বড় হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা লাভ ছাড়া কোনও কাজ করে না। তাহলে এটা কেন করবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে অনুসন্ধান করেছি। বিভিন্ন সেমিনারেও বলেছি যে তরমুজে এটি করা সম্ভব নয়।’
তরমুজ খেয়ে পেট খারাপ হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক সময় তরমুজ ফাটা থাকে। চুল পরিমাণও ফাটা থাকতে পারে। এতে তরমুজের ভেতরে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। আবার যদি ফুটো থাকে, তবে সেখান দিয়ে সামান্য পানির সঙ্গে জীবাণুও প্রবেশ করতে পারে। মিষ্টি ও রসালো ফল হওয়ায় জীবাণু সেখানে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করতে পারে। এতে কলেরা-ডায়রিয়াও হতে পারে। তাই তরমুজ কেনার সময় ভালো করে দেখে কেনা উচিত।’
কৃষি তথ্য সার্ভিসের পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘টনে টনে তরমুজ ট্রাকে কিংবা লঞ্চে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসছে। অনেকে ভাবেন এতে রঙ পুশ করা হয় টকটকে লাল দেখানোর জন্য। এমনটা মনে করার কারণ হচ্ছে তরমুজ ব্যবসায়ীরা অনেক সময় ফালি করে কেটে বিক্রি করে। পাকা তরমুজ গাঢ় লাল দেখায়। আবার দেখা যায় পাশে রাখা আরেকটা তরমুজ ফ্যাকাসে লাল। এতে সন্দেহ বাড়ে। তবে এটা প্রাকৃতিক কারণেই হয়। ইদানীং আবার দাম বেশি হওয়ায় অনেক অপরিপক্ব তরমুজ বাজারে চলে আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তরমুজে রঙ পুশ করে খুব একটা লাভ নেই। রঙ থাকলে সেটি ধোয়ার পর আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা। এমন কোনও ভেজালের প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।’
প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, গরমে তরমুজ শরীরের পানির অভাব দূর করে। সেজন্যই তরমুজ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তরমুজের মধ্যে ফাইবার এবং আরও কিছু উপাদান আছে, যা অনেকের হজম হয় না। গরমে তারাই তরমুজ খাবেন, যাদের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না।’
তরমুজে অ্যালার্জি জনিত সমস্যা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সমস্ত পদার্থই কোনও না কোনও ব্যক্তির জন্য অ্যালার্জিক হতে পারে।’