ঢাকা শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি আদায়ে স্পেশাল সেল গঠন
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৪-২২ ২১:০২:১০

ঋণ অনিয়মসহ বিভিন্ন কারণে আর্থিক দুরবস্থায় পড়েছে কয়েকটি নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। খেলাপিদের কাছে আটকে আছে প্রতিষ্ঠানগুলোর হাজার কোটি টাকা। কিন্তু ঋণখেলাপিদের করা রিটের কারণে আটকে থাকা অর্থ আদায় করতে পারেছে না প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব আইনি সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য একটি স্পেশাল সেল গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মূলত নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপিদের করা মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়েই কাজ করবে এই সেল। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রিট, মামলা ও উকিল নোটিসের জবাব দেবে এই সেল। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।

পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের নির্দেশে গত ১ এপ্রিল আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগের অধীনে ‘লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স সেল’ নামে একটি নতুন সেল গঠন করা হয়। হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টমেন্ট-১-এর আবকাশিক থেকে একজন যুগ্ম পরিচালক, একজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালক এবং একজন অফিসারসহ পাঁচটি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।

বিশেষত এই সেলের কাজ হবে মামলা-সংক্রান্ত সব কেস উপস্থাপন। সংশ্লিষ্ট শাখার সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও মতামত সংগ্রহ এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ। জরুরি সব মামলা চিহ্নিত করে দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ প্রদান। নিয়োগকৃত আইনজীবীকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান। এছাড়া আইনজীবীর পক্ষ থেকে দেয়া বিভিন্ন বিল যাচাই-বাছাই করে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করা। মামলা-সংক্রান্ত ডেটাবেজ প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও নিয়মিত হালনাগাদ করা। এর বাইরে রেজিস্ট্রার অফিস, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগ ও শাখা অফিসের সঙ্গে তথ্যের আদান-প্রদান। লিগ্যাল নোটিসের জবাব প্রদান। যেকোনো নীতি প্রণয়নে মতামত প্রদানের আগে বা গাইডলাইন ও সার্কুলার প্রণয়নের আগে ভেটিং করা। আদালতে চলমান মামলাগুলো নিয়মিতভাবে তদারকি করা। বিভাগীয় যেকোনো প্রয়োজনে আইনগত মতামত প্রদান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে যেকোনো কার্যক্রম গ্রহণ। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই এই পরিপত্র কার্যকর বলে গণ্য হবে।

জানা গেছে, খেলাপি ঋণ আদায়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন মামলা করে তখন সে মামলা স্থগিত করে দেয় ঋণখেলাপিরা। এ ধরনের মামলাজটে আটকে আছে বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ। সে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের আইনি সহযোগিতার জন্য উল্লিখিত পরিপত্র জারি করা হয়।

এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে নতুন করে কোনো ঋণ খেলাপি হচ্ছে না। এরপরও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ দুই বছরে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বল তদারকি ব্যবস্থা, প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অদক্ষতা ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতিনিয়ত দুর্বল হচ্ছে এসব প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার মডেল প্রায় এক হওয়ার কারণেও ভালো ব্যবসা করতে পারছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের অংক দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ৫ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।

কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে খারাপ করছে এসব প্রতিষ্ঠান। এর ফলে খেলাপি ঋণও বাড়ছে। কমপক্ষে ১০টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সময়মতো টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এ কারণে পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে অবসায়ক নিয়োগ হয়। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি অবসায়ন হয়নি। এতে আরও খারাপ হচ্ছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো।

টাকা ফেরত দিতে না পারা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এগুলো প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের দখল করা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো দখলের সময় পি কে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। আর এসব কাজে তাকে সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা। এসব প্রতিষ্ঠান দখলের পর নামে-বেনামে টাকা বের করেন তিনি। এখন এসব ঋণই খেলাপি হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা টাকা বের করেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে উঠে আসে। এসব ঋণ এখন খেলাপি হয়ে পড়ছে। তবে বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর মধ্যেও ভালো অবস্থায় আছে। ভালো প্রতিষ্ঠানগুলোর ভালো পারফরম্যান্সের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে খারাপ প্রতিষ্ঠানগুলোর নানা ধরনের ঋণ কেলেঙ্কারি। এসব ঋণই মন্দমানের; যা আদায়ে মামলা করা হয়েছে অর্থঋণ আদালতে। মামলাজটে এসব মামলা নিষ্পত্তির কোনো খবর নেই।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হলে আমানতকারীরা সর্ব্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন
বিএইচবিএফসির শহীদ দিবস পালন
ঋণের দুই শতাংশ পরিশোধে খেলাপি মুক্তি