ঢাকা রবিবার, মে ১৯, ২০২৪
ব্যাংকে উচ্চ পদে নারীর সংখ্যা বাড়ছে
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৩-৩০ ১১:৫৭:১৯

দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। শিক্ষার হারেও নারী-পুরুষ প্রায় সমান। সরকারি চাকরিতে নারীর অংশগ্রহণও ছাড়িয়েছে চোখে পড়ার মতো। পিছিয়ে নেই ব্যাংক খাতেও। এ খাতে নারীর অংশগ্রহণ কম থাকলেও ধীরে ধীরে ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। দেশে বর্তমানে ২৮ হাজারেরও বেশি নারী ব্যাংক খাতে চাকরি করছেন, যা মোট জনবলের ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। ব্যবস্থাপনা পরিচালক,উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে আছেন হাতে গোনা কয়েকজন নারী।

নাজনীন সুলতানা বাংলাদেশের প্রখ্যাত ব্যাংকার। তিনি বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম মহিলা ডেপুটি গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।তিনি ১৯৮০ সালে সরাসরি সহকারী পরিচালক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদান করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে দায়িত্ব পালন করেন।

বেসরকারি খাতে আছেন ট্রাস্ট ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম। বর্তমানে ব্যাংকটির এমডির (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) হিসাবে নিয়োগ পেয়েছেন।দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে তিনিই সর্বপ্রথম ব্যাংকের নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সরকারি বাণিজ্যিক এবং বিশেষায়িত ব্যাংকে নারী এমডি হওয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি শিরীন আখতার। কৃষি ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিাসবে আছেন পারভিন আক্তার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৬ জনে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ৩৭৮ জন নারী কর্মী, যা মোট জনবলের ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারি বাণিজ্যিক ৬ ব্যাংকে কর্মরত ৫০ হাজার ১৬ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ৭ হাজার ৬৩৯ জন, যা মোট কর্মীর ১৮ দশমিক ০৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) শিরীন আখতার বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং স্পিকার নারী। এছাড়া রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীরা কাজ করছেন। ব্যাংকেও যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বেসরকারি খাতের ৪১টি ব্যাংকে কর্মরত ১ লাখ ১৫ হাজার ৬৭৩ জনের মধ্যে নারী কর্মী রয়েছে ১৭ হাজার ৮৯৫ জন, যা মোট জনবলের ১৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। রূপালী ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ইয়াছমিন বেগম বলেন, ব্যাংকিং খাতে এগিয়ে যাচ্ছেন নারীরা। ভবিষ্যতে তারা আরও এগিয়ে যাবেন। কারণ এখানে কাজের পরিবেশ ভালো।

ইসলামী ব্যাংকেও নারী কর্মীর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে দিন দিন। ব্যাংকটির মানবসম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের কর্মীসংখ্যা ১৮ হাজার ৫০০। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি।

ট্রাস্ট ব্যাংকের নব নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হুমায়রা আজম বলেন, সংসার ও চাকরি দুটা এক সঙ্গে করা সহজ নয়। সবাই বলেন ওয়ার্ক লাইফ ব্যালেন্স। আসলে চাকরি করলে সংসার পুরো হয় না। আবার সংসার করলে চাকরি পুরো হয় না এটাই সত্য কথা। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করেছি। এখনো চলছে। ঘানি টেনে যাচ্ছি। নারী হলে যেটা হয়, অফিসেও কাজ করতে হয় সংসারে এসেও কাজ করতে হয়। জীবন ব্যালেন্স করা খুব কঠিন। একজন নারীকে যদি ক্যারিয়ারে নজর দিতে হয়। তাকে অনেক সিরিয়াস হতে হবে। শতভাগ কাজ করেই তাকে টিকে থাকতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে ১০০ নয় হাজারো ভাগ কাজ করে টিকে থাকতে হয়। কর্ম জীবনে এটাই বাস্তবতা।

এতো কিছুর পরও ব্যাংকে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে উল্লেখ করে হুমায়রা আজম বলেন, ব্যাংকে নারী কর্মী বাড়ছে আগামীতে আরোও বাড়বে। এর মূল কারণ নারীরা অনার্স মাস্টার্স পাস করার পর এটার মূল্যায়ন হিসাবে চাকরিতে আসছেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের জবকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। তবে যাদের বাড়িতে মা বা শাশুড়ি আছেন অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতা পান তাদের জন্য কাজ করা কিছুটা সহজ হয়। আর যাদের এ সহযোগিতা নেই তাদের টিকে থাকা খুবই চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতের মোট পরিচালকদের ১২ দশমিক ২০ শতাংশ নারী। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী পরিচালক রয়েছেন বিদেশি মালিকানার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। এসব ব্যাংকের পরিচালকদের ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ নারী। বেসরকারি ব্যাংকের ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ পরিচালক নারী। আর রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে এ হার ৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক বাদে দেশে কার্যরত অন্য ৫৯টি তপশিলি ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে জনবলের সংখ্যা ১ লাখ ৮৩ হাজার ২০৩। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, এরমধ্যে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৮ জন। আর নারী কর্মীর সংখ্যা ২৮ হাজার ৩৭৮ জন। সে হিসাবে ব্যাংকগুলোতে নারী কর্মী ১৮ দশমিক ৩২ শতাংশ। অন্যদিকে ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর রয়েছেন ১৬ শতাংশ। দেশের ৩৪টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ১৫ জন নারী চাকরি করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকগুলোতে ৩০ বছরের কম বয়সি যেসব কর্মী রয়েছেন তাদের মধ্যে ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ নারী। ৩০ থেকে ৫০ বছর বয়সি কর্মীদের মধ্যে নারীর হার ১৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আর ৫০ বছরের বেশি বয়সিদের মধ্যে এ হার ৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। আর সূচনা পর্যায়ে নারী কর্মী রয়েছেন ১৫ দশমিক ৯১ শতাংশ। মধ্যবর্তী পর্যায়ে আছেন ১৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। আর উচ্চ পর্যায়ে রয়েছেন ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ। হিসাবে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ প্রারম্ভিক পর্যায়ে বেশি।

 ব্যাংক এশিয়ার বোর্ড অডিট কমিটির চেয়ারম্যান এম এ বাকী খলীলী
প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন এমডি মোহাম্মদ আবু জাফর
পদ্মা ব্যাংক থেকে নাফিজ সরাফতের পদত্যাগ