সিলেট নগরের বন্দরবাজার ফাঁড়িতে গত ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশের নির্মম নির্যাতনে রায়হান আহমদকে হত্যা করা হয়। সেই বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনেই ছেলে হত্যায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন রায়হানের মা সালমা বেগম।
রোববার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। এই অনশন কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে এতে যোগ দিয়েছেন রায়হানের ভাই-বোন, চাচা-চাচি, মামা, খালা, আত্মীয়স্বজনসহ সিলেটের শতাধিক সাধারণ মানুষ।
এ সময় রায়হানের মা সালমা বেগম বলেন, আমি যেখানে আমার আদরের ধনকে হারিয়েছি, সেখানেই আমরণ অনশন শুরু করছি। এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি এসআই আকবরসহ সকল আসামিকে গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমাদের অনশন চলবে।
সালমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রায়হান নিহতের ঘটনায় বরখাস্তকৃত সকল পুলিশ সদস্যদেকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। আমার ছেলে হত্যার ১৩ পার দিন হলেও কেন ঘটনার মূল হোতা এসআই আকবরকে গ্রেফতার করছে না পুলিশ। এসআই আকবরসহ অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে রায়হানের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে এসএমপির কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার তান্নি।
১৪ অক্টোবর মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরের কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি লাশ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১১ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ঘটনায় গত ২০ অক্টোবর বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় ওই ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবল টিটু চন্দ্র দাসকে ও ২৩ অক্টোবর পুলিশ কনস্টেবল হারুনুর রশিদকে গ্রেফতারের পর পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
ঘটনার দিন বিকেলে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলে রায়হানকে ফাঁড়িতে এনে নির্যাতনের প্রাথমিক প্রমাণ পায় কমিটি। এই তদন্ত কমিটির সুপারিশে বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া, কনস্টেবল হারুনুর রশিদ, তৌহিদ মিয়া ও টিটুচন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত এবং এএসআই আশেক এলাহী, এএসআই কুতুব আলী ও কনস্টেবল সজিব হোসেনকে প্রত্যাহার করে তাদের পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
এছাড়া গত ২১ অক্টোবর এ ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (সাময়িক বরখাস্তকৃত) উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে ফাঁড়ি থেকে পালাতে সহায়তা করা ও তথ্য গোপনের অপরাধে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির টু আইসি এসআই হাসান উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।