গত ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪১ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। এই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে সরকারি ছয় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কমেছে এক হাজার ৩৫১ কোটি টাকা। মূলত ঋণ পুনঃতফসিলকরণ ও অবলোপনের কারণে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভাগের সাথে করা বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় সরকারি ব্যাংক সম্প্রতি ব্যাংকগুলো এ তথ্য জানিয়েছে।
তবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত এক বছর যাবৎ ঋণ আদায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কারণ, করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ পরিশোধে শিথিলতা দেয়া হয়। বলা হয়, কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও ওই ঋণ খেলাপি করা যাবে না। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা আরো দুই দফা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত টেনে নেয়া হয়। এমনিতেই সরকারি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এক ধরনের উদ্যোক্তারা ঋণ পরিশোধ করতে চান না, এর ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় অনেকেই ঋণ পরিশোধ বন্ধ করে দেন। এর পাশাপাশি কিছু ঋণ নবায়নও করা হয়। এক দিকে ঋণ আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়া এর পাশাপাশি কিছু ঋণ নবায়ন করার বিষয়টি খেলাপি ঋণ কমাতে সহায়ক হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ওপর শিথিলতা না দিলে খেলাপি ঋণ না কমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বেড়ে যেত।
এ দিকে গত বছরের সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ কমেছে অক্টোবর-নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। এই সময় এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমেছে এক হাজার ১৯২ কোটি টাকা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, চলতি অর্থবছর (২০২০-২১) শেষে অর্থাৎ আগামী জুন শেষে ছয় ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি ৩৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা নামিয়ে আনতে হবে। সে হিসেবে চলমান অর্ধবার্ষিকে ব্যাংকগুলোকে তাদের খেলাপি ঋণের স্থিতি তিন হাজার ৬২৬ কোটি টাকা কমিয়ে আনতে হবে।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ গত সেপ্টেম্বর শেষে ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৯৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বেড়ে গিয়েছিল। গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের মোট স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ১২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং সেপ্টেম্বর শেষে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩ হাজার ১১৮ কোটি ১১ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণ কমে যাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে সরকারি এক ব্যাংকের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে বিশেষ সুবিধা ও ছাড়ের কারণে খেলাপি ঋণ কমেছে। পাশাপাশি সরকার প্রদত্ত বিশেষ সুবিধার আওতায় বেশ কিছু ঋণ পুনঃতফসিল বা অবলোপন করা হয়েছে। এসব কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ কমেছে।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ছয় ব্যাংকের সবক’টিরই খেলাপি ঋণ কমেছে। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৩২২ কোটি টাকা (গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১০ হাজার ৭৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা); জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৪৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা (গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ১৩ হাজার ৯৯৯ কোটি ২০ লাখ টাকা); অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা); রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪৮ কোটি ২৬ লাখ টাকা (গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল চার হাজার ১০২ কোটি ২২ লাখ টাকা); বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৫০২ কোটি তিন লাখ টাকা (সেপ্টেম্বর শেষে ছিল সাত হাজার ৬০৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা) এবং বিডিবিএল ব্যাংকের খেলাপি ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬০৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা (গত সেপ্টেম্বর শেষে ছিল ৬৫৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা)। এর আগে ২০১৯ সালে ডিসেম্বর শেষে সোনালী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ১০ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, জনতায় ১৪ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা, অগ্রণীতে ছয় হাজার কোটি টাকা, রূপালীতে চার হাজার ২২৬ কোটি টাকা, বেসিক ব্যাংকে সাত হাজার ৫০৮ কোটি টাকা এবং বিডিবিএলে খেলাপি ঋণের স্থিতি ছিল ৭৬৪ কোটি টাকা।