ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝে নিজের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত করেছেন ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিবন্ধী চন্দন কুমার বণিক। সব বাধা পেরিয়ে এখন তিনি একজন সফল ব্যাংক কর্মকর্তা। তার কর্মদক্ষতায় খুশি সহকর্মীরাও।
জন্মের পর সবকিছু ঠিকই ছিল ঠাকুরগাঁওয়ের চন্দন বণিকের। কিন্তু দেড় বছর বয়সে পোলিওর আক্রমণে পাল্টে যায় জীবনের গল্প। অন্য সবার মতো স্বাভাবিক না হওয়ায় স্কুল-কলেজে যান বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে। সব বাধাবিপত্তি পাড়ি দিয়ে শেষ করেন লেখাপড়া।
কিন্তু হতাশ হতে হয় চাকরির প্রতিযোগিতায় নেমে। অবশ্য সেই যন্ত্রণা সইতে হয়নি বেশি দিন। ২০১৫ সালে ধরা দেয় সেই সোনার হরিণ। চাকরি মেলে সোনালী ব্যাংকে। চন্দনের জীবনের গল্পও নেয় নতুন মোড়। বিয়ে করে হয়েছেন সুস্থ সন্তানের বাবা।
চন্দনের বাবা রোহিনী চন্দ্র বণিক বলেন, ‘আজ আমি একজন সফল বাবা। চন্দনের কলেজে যখন টাকা দিতে পারতাম না বাসায় খুবই কান্না করতাম। তবুও চন্দন হতাশ হয়নি। সে সব সময় আমাকে সান্ত্বনা দিত। প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিত। আমার চন্দন এখন সফল। সে ভুল্লী জালালী বানিয়াপাড়া এলাকার গৌরব। তার এই সফলতা অন্য প্রতিবন্ধীদের এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা করি।’
শারীরিক প্রতিবন্ধী ঠাকুরগাঁও সোনালী ব্যাংকের অফিসার চন্দন কুমার বণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘নিজেকে আজ সার্থক মনে হচ্ছে এই ভেবে যে, এখন আমি একটা ভালো চাকরি করছি। গ্রামে গেলে লোকজন আমাকে দেখতে আসে। পরিবারের লোকজনের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। এখন ঠাকুরগাঁওয়ে একটি বাড়ি করে বাবা-মাকে শহরে নিয়ে চলে আসব।’
কথা কখনো ভুলতে পারব না। আমি হাঁটতে পারতাম না, তারা আমাকে সাইকেলে কলেজ ও প্রাইভেটে নিয়ে গেছে। তাদের ওই সহযোগিতার কারণে আমার জীবনের সফলতা সহজ হয়েছে।
আমাদের দেশে প্রতিবন্ধীরা অবহেলিত। শিক্ষার দিক থেকে প্রতিবন্ধীরা অনেক পিছিয়ে রয়েছে। আমার মতো প্রতিবন্ধীরা যেন শিক্ষিত হতে পারে তাই তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’
ঠাকুরগাঁও সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সামছুল আলম বলেন, ‘চন্দন কুমার বণিক ব্যাংকের একজন কর্মঠ অফিসার। তার কাজের মান আমাকে মুগ্ধ করেছে। তাকে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তার প্রতিবন্ধকতার জয় আমাদের সমাজের গর্ব।’