ঢাকা শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫
৫০০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে দুই ভায়রা লাপাত্তা
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০১-৩১ ২০:৪২:৩১

দুই খেলাপি ব্যবসায়ী এসএম আবদুল হাই ও এসএম শামীম ইকবাল। তারা উভয় কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের জামাতা। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণসুবিধা গ্রহণ করলেও সময়মতো ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করেননি তারা। উভয়ের বিভিন্ন ব্যাংকে খেলাপি প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা। এ দু’জনকে ব্যাংক পাওনা আদায়ের জন্য খুঁজে পাচ্ছে না। তবে তাদের বিরুদ্ধে থাকা বিভিন্ন ব্যাংকের চেক প্রতারণা ও ঋণখেলাপির মামলা চলমান আছে।

দু’জনের মধ্যে লিজেন্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আবদুল হাইয়ের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৫২৫ কোটি টাকা। আর এসএম শামীম ইকবালের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা প্রায় ৬৭ কোটি টাকা।

বিভিন্ন পাওনাদার ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের অভিজাত ব্যবসায়ীদের বাণিজ্য সংগঠন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দু’জন পরিচালক আবদুল হাই ও এসএম শামীম ইকবাল। তারা একে অন্যের ভায়রা-ভাই। এর মধ্যে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির এলাকা বাসিন্দা এসএম আবদুল হাই লিজেন্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। যিনি খলিলুর রহমান ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন উদ্যোক্তা পরিচালক। একই ব্যাংকের ঋণখেলাপি তালিকায় আছেন তার জামাতা এসএম আবদুল হাই।

আবদুল হাইয়ের মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ন্যাশনাল ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার মোট পাওনা প্রায় ১৭৮ কোটি টাকা। শুধু ন্যাশনাল ব্যাংক নয়, সাউথইস্ট ব্যাংকের পাওনা আছে ১৪৬ কোটি, এসআইবিএলের খেলাপি পাওনা ১৩৫ কোটি টাকা, এবি ব্যাংকের ৬৫ কোটি এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের দেড় কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত পাঁচ ব্যাংকের খেলাপি পাওনার পরিমাণ ৫২৫ কোটি টাকা। যদিও বছর দুয়েক আগে কৌশলে আড়ালে চলে যান লিজেন্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম আবদুর হাইসহ অন্যান্য পরিচালক।

অন্যদিকে সরকার মোহাম্মদ শামীম ইকবাল বা এসএম শামীম ইকবাল ব্যাংক এশিয়া, পদ্মা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি তালিকায় আছেন। যদিও শ্বশুরের বদান্যতায় তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কেডিএস অ্যাকসেসরিজের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এসব পদ-পদবি ব্যবহার করে নিজের নামে এনএম ট্রেডিং করপোরেশন, ডমিনিক্স এমআই লিমিটেড, গওজ ফ্যাশন লিমিটেড, হংকংভিত্তিক ডমিনিক্স গ্লোবাল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, স্পার্ক ট্রেডিং কোম্পানি, রূপকথা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড প্রভৃতি নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

যদিও তার অদূরদর্শী প্রকল্প গ্রহণ, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব ও ব্যবসায়িক অনভিজ্ঞতায় এসব প্রতিষ্ঠান ডুবেছে। তার ঋণ গ্রহণের কারণে বিপাকে পড়েছে ব্যাংক এশিয়া, ওয়ান ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ইউসিবিএল, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেডসহ বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ডমিনিক্স রিয়েলটি (বিডি) লিমিটেডের নামে খেলাপি ৩২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখায় এনএম ট্রেডিংয়ের নামে ২৭ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখায় গওজ ফ্যাশন লিমিটেডের নামে পাঁচ কোটি এবং ব্যাংক এশিয়ায় ডমিনিক্স রিয়েলটি নামে এক কোটি টাকা খেলাপি। আর ঋণের টাকা ফেরত পেতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চেক প্রত্যাখ্যান ও অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছে এবং করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, লিজেন্ড গ্রুপের মালিকাধীন লিজেন্ড টেক্সটাইল, এলএম মাসিনারা এশিয়া লিমিটেড, লিজেন্ড পাওয়ার প্লান্ট, লিজেন্ড ট্যাংক টার্মিনাল, ইমাজিন হোটেল লিমিটেড, মৃতিকা এগ্রো ফার্মস, লিজেন্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি নামে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। এর মধ্যে কর্ণফুলী ইপিজেডে লিজেন্ড টেক্সটাইল, এলএম মাসিনারা এশিয়া লিমিটেড এবং এস্টেথেটিকস ইলেকট্রনিক্সস লিমিটেড নামের তিনটি কারখানা বহু আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া লিজেন্ড পাওয়ার প্লান্ট, লিজেন্ড ট্যাংক টার্মিনাল, মৃত্তিকা এগ্রো ফার্মস, লিজেন্ড ট্রেড সেন্টার ইত্যাদি নামে প্রতিষ্ঠান অনেক কাগজে-কলমের প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে এসএম শামীম ইকবালের মালিকানাধীন এনএম ট্রেডিং করপোরেশন, ডমিনিক্স এমআই লিমিটেড, গওজ ফ্যাশন লিমিটেড, স্পার্ক ট্রেডিং কোম্পানি, রূপকথা কনস্ট্রাকশন লিমিটেডসহ বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ আছে।

এসএম আবদুল হাইয়ের বিষয়ে ন্যাশনাল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, এসএম আবদুল হাই ব্যবসার প্রয়োজনে ঋণ নিলেও আর ঋণ ফেরত দেয়নি। তার জাহাজ কাটার ব্যবসায় অভিজ্ঞতা ছিল না। আর এ পাওনা আদায়ে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ও তার প্রতিনিধিরা তেমন আগ্রহও দেখায়নি। তার আগেই সরিয়ে নেন আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় আসসালাম টাওয়ারের ১১ তলার লিজেন্ড গ্রুপের অফিস। এরপর তার কুকীর্তি প্রকাশ হতে থাকে। এরপর এক একটি ব্যাংকে খেলাপি হওয়ার তথ্য প্রকাশ হতে থাকে। গত দুই বছর ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। আমরা শুনেছি তিনি কানাডায় অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে এসএম শামীম ইকবালের ঋণের বিষয়ে ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এসএম শামীম ইকবালের মালিকানাধীন গওজ ফ্যাশন লিমিটেডের নামে নেয়া ঋণ এখন খেলাপি। তার সঙ্গে যোগাযোগের জন্য একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। সুদাসলে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা পাওনা। আমরা এ পাওনা আদায়ে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। শুধু আমাদের ব্যাংকে খেলাপি নন, পদ্মা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ আরও কয়েক ব্যাংকে খেলাপি। শুনেছি, তিনি একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির জামাতা। তার মানসম্মান তো তার জামাতারাই নষ্ট করছেন।

ব্যাংকে নারী কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে
ইউনিয়ন ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ আট কর্মকর্তাকে দুদকে তলব
কিছু ব্যাংকের বাঁচার সম্ভাবনা ‘ক্ষীণ’, ডিজিটাল ব্যাংক এখনই নয়: গভর্নর