১৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এতে ৭৩টি দেশের দুইশত সাতাশটি ২৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। মুজিব শতবর্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি উৎসর্গকৃত রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ-এর উদ্যোগে ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’ এই শ্লোগানে আগামী শনিবার ১৬ থেকে ২৪ জানুয়ারি এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা ক্লাবের সুইমিংপুলের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ঊনবিংশতম আয়োজনের সার্বিক দিক গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরা হয়।
সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বরাবরের মত এবারের উৎসবেও থাকছে এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিল্ড্রেন ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার বিভাগ। তবে উৎসবে এবারই প্রথম সংযুক্ত হচ্ছে ‘লিজেন্ডারি লিডারস হু চেঞ্জ দি ওয়ার্ল্ড’ এবং ‘ট্রিবিউট’ নামে আরো দু’টি নতুন বিভাগ, যা এবারের উৎসবকে আরও উচ্চতর মাত্রা দেবে। এবারেরর উৎসবে মোট ৭৩টি দেশের দুইশত ২৭টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শন ও আন্তর্জাতিক পরিবেশনার কাজ করে আসছে। ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এশিয়ার একশটি গুরত্বপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব যা বিশ্বে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জন্য একটি নান্দনিক ও ইতিবাচক চলচ্চিত্র সংস্কৃতি তৈরিতে কাজ করে আসছে। এই উৎসব তরুণ ও প্রতিশ্রুতিশীল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের এশিয়া ও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করে যাচ্ছে।
বিগত উৎসবের ন্যায় এবারও যারা আমাদের বিশেষভাবে সহযোগিতা করছে তাদের মধ্যে অন্যতম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাস। উৎসব পার্টনার হিসেবে থাকছে- বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার, নরওয়েজিয়ান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হাগুসেন্ড, রিলিজিওন টুডে ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ঢাকা ক্লাব লিমিডেট, বালিক আর্ট, চ্যানেল আই, দুরন্ত টিভি, একাত্তর টিভি, একসন এইড, ক্লাউড লাইভ, লাগ ভেলকি এবং সেন্স ফর ওয়েভ। এবারই প্রথম উৎসবে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
আগামী ঊনবিংশ উৎসবে বাংলাদেশসহ ৭৩টি দেশের ২২৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে পূর্ণদৈর্ঘ্য (৭০ মিনিটের বেশি) চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১০৭টি, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন চলচ্চিত্রের সংখ্যা ১২০টি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আছে ৪১টি যার মধ্যে ৩৩টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও স্বাধীন এবং ৮টি প‚র্ণদৈর্ঘ্য। যে সব দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শীত হবে তার মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, আজারবাইজান, বাহরাইন, বেলজিয়াম, ভুটান, ব্রাজিল, কানাডা, চিন, কিউবা, সাইপ্রাস, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, প্যালেস্টাইন, জার্মানি, গ্রিস, হংকং, হাঙ্গেরি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইটালি, জাপান, কাজাকস্তান, কসোভো, কিরগিস্তান, লাটভিয়া, লেবানন, লুক্সেমবার্গ, মালয়েশিয়া, মেক্সিয়া, নেপাল, নরওয়ে, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, পোল্যান্ড, পর্তুগাল, কাতার, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, সিরিয়া, তাইওয়ান, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, আরব-আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভেনিজুয়েলা, সাইপ্রাস এবং স্বাগতিক বাংলাদেশ।
রেইনবো চলচ্চিত্র সংসদ বিগত ১৯৭৭ সাল থেকে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট থেকে সৎ চলচ্চিত্র প্রদর্শন সংস্কৃতি বিকাশে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখে চলেছে।
এই আন্তর্জাতিক উৎসবের মাধ্যমে দেশের সিনেমাপ্রেমীরা সারাবিশ্বের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের নতুন নতুন চলচ্চিত্র উপভোগ করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাই, চলচ্চিত্রমোদীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা আমাদের অনুপ্রাণিত করে এবং তাদের বছরদীর্ঘ অপেক্ষার পর আগামী শনিবার ১৬ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় পর্দা উঠছে ১৯তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হোসেন এমপি এবং বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনার মি. বিক্রম কে দোরাইস্বমী। এছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শীত হবে।
উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর স্থানসমূহ- জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তন ও কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তন, কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তন, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা মিলনায়তন, শিল্পকলার নন্দন থিয়েটার (মুক্তমঞ্চ), বসুন্ধরার স্টার সিনেপ্লেক্স এবং সীমান্ত স্কয়ার সিনেপ্লেক্স।
চলচ্চিত্র দেখার নিয়মাবলী:
১. জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তন: সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটম‚ল্য ৫০ টাকা।
২. কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তন: এখানে সকাল ১০টা থেকে শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শীত হবে। যেখানে অভিভাবকরাও শিশুদের সঙ্গে এই চলচ্চিত্রগুলো বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া, সকাল ১০টা, দুপুর ১টা ও বিকাল ৩টার প্রদর্শনী শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে দেখতে পারবেন। সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্র প্রদর্শন করতে হবে। এর বাইরে, সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য টিকেটম‚ল্য ৫০ টাকা।
৩. জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন: এই মিলনায়তনের সব প্রদর্শনী সবাই বিনামূল্যে উপভোগ করতে পারবেন। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
৪. শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা ও নৃত্যশালা: এখানকার প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত। আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় আগে আসলে দেখবেন ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে।
৫. শিল্পকলার নন্দনমঞ্চ: এখানকার প্রদর্শনীগুলো সবার জন্য উন্মুক্ত।
এবারের উৎসবে মিলনায়তনের পাশাপাশি অনলাইনেও চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ রয়েছে। লাকভেলকি অনলাইন প্লাটফরমে উৎসব চলাকালীন সময়ে নির্বাচিত চলচ্চিত্রগুলো দেখতে পারবেন।
এছাড়া আগামী ১৭-১৮ জানুয়ারী ২০২১ উৎসবের অংশ হিসেবে চলচ্চিত্রে নারীর ভূমিকা বিষয়ক ‘সপ্তম আন্তর্জাতিক উইমেন ফিল্ম মেকারস্ কনফারেন্স’ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। সাংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ এমপি ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টায় কনফারেন্স উদ্বোধন করবেন। শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকি আলোচক হিসেবে থাকবেন। উক্ত কর্মশালায় দেশি বিদেশি নারী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও ব্যক্তিত্বদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারী নির্মাতাগণ অভিজ্ঞতা অর্জনের একটি সুবর্ণ সুযোগ পাবেন বলে আশা করছি। এখানে নারী নির্মাতারা তাদের কাজ করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং উত্তোরণের উপায় নিয়ে বিশে^র খ্যাতিমান নারী নির্মাতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। বিশ^ পরিবর্তনে নারীর নেতিবাচক ও ইতিবাচক ভ‚মিকা এবং প্রতিবন্ধকতা থেকে সমাধানের উপায়সমূহ উঠে আসবে এই কনফারেন্সে। ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের মূল আকর্ষনগুলোর একটি এই উইমেন্স কনফারেন্স।