অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর জোরালো প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে বিশ্ব প্রতিযোগিতায় ক্রমেই অবস্থান এগিয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ। ২০৩৫ সালের মধ্যেই বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হবে চলতি বছর ৪১তম অবস্থানে থাকা দেশটি। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০৩৫ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার তিন গুণ বেড়ে হবে প্রায় ৮৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০২০ সালে অর্থনীতির আকার ৩০ হাজার ১০০ কোটি ডলার। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ হবে ৩৪তম এবং ২০৩০ সালে হবে ২৮তম অর্থনীতি। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ হিসেবে থাকা বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমেই আরো এগিয়ে যাবে। ২০৩০ সালে এই অঞ্চলে শীর্ষে থাকা ভারত হবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতি।
প্রতিবছর বার্ষিক লীগ টেবিলে ১৯৩ দেশের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলে ধরে সিইবিআর। বাংলাদেশের বিষয়ে তারা বলছে, করোনা মহামারি সত্ত্বেও এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি সংকুচিত হবে না। ২০২০ সালে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৩.৮ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যেখানে ২০১৯ সালে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়।
সিইবিআরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বার্ষিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি গড়ে ৬.৮ শতাংশ অর্জিত হবে। ক্রয়ক্ষমতার (পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটি) ভিত্তিতে মাথাপিছু জিডিপি পাঁচ হাজার ১৩৯ ডলার নিয়ে বাংলাদেশ বর্তমানে একটি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ।
বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস র্যাংকিং ২০২০-এ ১৬৮তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। থিংকট্যাংক প্রতিষ্ঠানটির মতে, এটি প্রমাণ করছে একটি বিকশিত বেসরকারি খাতের জন্য নিয়ন্ত্রণগত পরিবেশ সহায়ক নয়। সিইবিআরের মতে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করলেও সে হিসাবে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল গড়ে মাত্র ১ শতাংশ, যা এ দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে জোরালো করছে।
সিইবিআরের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে অতিক্রম করে ২০২৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক দেশ হবে চীন, যা আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর আগের পূর্বাভাসের চেয়ে পাঁচ বছর আগে। করোনা মহামারি থেকে পুনরুদ্ধারে দুই দেশের তারতম্যের কারণেই চীন এগিয়ে যাবে বলে থিংকট্যাংক জানায়।
বলা হয়, ‘করোনা মহামারির পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও পুনরুদ্ধার প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে এগিয়ে রেখেছে। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই চীনের লকডাউন এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনার বিপরীতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে তুলনামূলকভাবে পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে চীনের অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ভালো।’
সংস্থার মতে, ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে গড়ে ৫.৭ শতাংশ। ২০২৬-৩০ সময়ে তা কমে হবে ৪.৫ শতাংশ। এর বিপরীতে ২০২২-২৪ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি হবে ১.৯ শতাংশ এবং এর পরে হবে গড়ে বার্ষিক ১.৬ শতাংশ করে। এ ছাড়া ২০৩০ সাল পর্যন্ত ডলারের হিসাবে জাপানই থাকবে বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ। এর পরই জাপানকে ছাড়িয়ে তৃতীয় স্থান নেবে ভারত এবং যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে থাকবে জাপান ও জার্মানি। ২০২৪ সালে পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ স্থানে নেমে যাবে যুক্তরাজ্য।
সিইবিআর জানায়, ২০২০ সালে শীর্ষ দশ বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে ইউরোপের অবদান থাকবে ১৯ শতাংশ, কিন্তু ২০৩৫ সালের পর তা ১২ শতাংশে বা আরো নিচে নেমে যেতে পারে ইইউ থেকে ব্রিটেনের সরে যাওয়ার কারণে। সংস্থার মতে, বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব দেখা যাবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মাধ্যমে, মন্থর প্রবৃদ্ধির মধ্যে নয়।