ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে পুনর্বিবেচনার দাবি সত্ত্বেও শুরুর পর্যায়ে বেতন-ভাতা নির্ধারণ এবং ছাঁটাই-পদোন্নতি নিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন আসবে না বলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে। ফলে ব্যাংকের এন্ট্রি পর্যায়ের কর্মকর্তার ২৮ হাজার টাকা এবং স্থায়ী হওয়ার পর ৩৯ হাজার টাকা বেতন দিতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি এবং প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির সঙ্গে বৈঠকে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আগামী ১ মার্চ থেকে ব্যাংকের এন্ট্রি পর্যায়ের কর্মকর্তার নূ্যনতম বেতন ২৮ হাজার এবং স্থায়ী হওয়ার পর ৩৯ হাজার টাকা নির্ধারণের নির্দেশ দিয়ে গত ২০ জানুয়ারি সার্কুলার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ নির্দেশনার বিষয়ে এর আগে গত মঙ্গলবার ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা। সেখানে আন্তর্জাতিক অনুশীলনের বাইরে এমন নির্দেশনা নিয়ে সমালোচনা হয়।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে বাংলাদেশ অসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে বৈঠকে অংশ নেন স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম, মেঘনা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমান প্রমুখ।
এ ছাড়া ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আর এফ হোসেন, সেক্রেটারি জেনারেল ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের এমডি খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন অংশ নেন।
জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পুরো সার্কুলারটি পড়ে ব্যাখ্যা করা হয়। সেখানে বলা হয়, সার্কুলারের বিষয়ে নানা অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। বিশেষ করে অযোগ্যদেরও পদোন্নতি দিতে হবে- এমন একটি বিষয় আলোচনা হচ্ছে। তবে এটা ঠিক নয়, বরং শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারায় কাউকে যেন পদোন্নতি বঞ্চিত, ছাঁটাই বা পদত্যাগে বাধ্য না করার নির্দেশনা রয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধ করতে নির্ধারিত বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনড় অবস্থান জানার পর বিএবি এটি কার্যকরে আরও সময় চায়। তবে সময় বাড়ানো হবে কিনা সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সার্কুলারের বিষয়ে কিছু অস্পষ্টতার কথা বলা হয়। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে তার ব্যাখ্যা ও প্রেক্ষাপট বর্ণনা করা হয়। বিস্তারিত আলোচনার পর সার্কুলার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও সময় দেওয়ার জন্য অনুরোধ এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি পর্যালোচনা করে দেখবে।
বিএবির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, হঠাৎ করে এভাবে একটি নির্দেশনা চাপিয়ে দিলে ব্যাংকের ওপর কোনো ধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া হবে কিনা, দেশের আর্থসামাজিক ক্ষতির আশঙ্কা আছে কিনা- এসব নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে। সব শুনে গভর্নর সুন্দর কোনো সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। এ সার্কুলার একটা বাস্তবসম্মত এবং ফলপ্রসূ কীভাবে করা যায় তিনি চেষ্টা করবেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা বোঝার ক্ষেত্রে কিছু ভুল আছে। এটা স্বচ্ছ করার জন্য আরও আলোচনার দরকার আছে। ফলে হঠাৎ করে মার্চে কার্যকর করতে হলে সমস্যা হতে পারে। যে কারণে আরও সময় নিয়ে এমডিদের সঙ্গে বসে আলোচনার ভিত্তিতে সমাধান চাওয়া হয়েছে। তারা বলেছেন, যাদের বেতন বাড়ানোর নির্দেশনা এসেছে তারা যেন ভালো থাকে, আবার ব্যাংকও যেন ভালো থাকে।
এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন বলেন, তারা ভেবেছিলেন অযোগ্য, অদক্ষদেরও পদোন্নতি দিতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে যে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তবে শুধু আমানত সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে কাউকে চাকরিচ্যুত বা পদোন্নতি বঞ্চিত করা যাবে না। আর বেতন-ভাতার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভেবে দেখবে বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছিল, প্রধান নির্বাহীর নিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তার সঙ্গে ব্যাংকের সর্বনিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করতে হবে। সব স্তরের কর্মকর্তাদের জন্য আনুপাতিক হারে বেতন নির্ধারণ করতে হবে।