ঢাকা শনিবার, মে ১৮, ২০২৪
১৫ শতাংশ পরিশোধে খেলাপি হবে না বড় উদ্যোক্তারা
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-১২-৩০ ২৩:৩৮:৩১

ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে আবারো ঋণ পরিশোধে কিছুটা ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে যেকোনো ঋণগ্রহীতা প্রদেয় কিস্তির ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পাবেন। যদিও এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, চলতি বছরে সিএসএমই খাত ছাড়া অন্য সব খাতের ঋণগ্রহীতাদের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গতকাল দেশের ১৫টি বাণিজ্যিক সংগঠনের নেতারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান। বিকাল ৪টায় শুরু হওয়া ওই সভা চলে প্রায় আড়াই ঘণ্টা। ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সভাপতি জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ও আবু ফরাহ মো. নাছের উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাতেই ঋণ পরিশোধে শিথিলতার কথা জানিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ১৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলেই ওই গ্রাহক খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন না। যেসব ঋণের প্রদেয় কিস্তির ১৫ শতাংশ আদায় হবে, সেগুলোর সুদ বা মুনাফা আয়ের খাতে স্থানান্তর করতে পারবে ব্যাংক। তবে বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে এর আগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২ শতাংশ অতিরিক্ত সাধারণ সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।

সভা শেষে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির বিচারে কিছু দাবি জানিয়ে আমরা এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে চিঠি দিয়েছিলাম। চিঠিতে উল্লেখিত বিষয়গুলোসহ অর্থনীতির স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দাবি নিয়ে আজ (বৃহস্পতিবার) বৈঠক হলো। বৈঠকে রফতানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার বৃদ্ধির দাবিসহ ঋণ গ্রহণের সীমা বাড়ানোর দাবি করেছি। একই সঙ্গে ঋণ শ্রেণীকরণের সময়সীমা আরো কিছুদিন স্থগিত রাখার দাবি জানিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংক আমাদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেছে। তবে চলতি বছরে প্রদেয় কিস্তির ২৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ পরিশোধ করলেই সব ঋণগ্রহীতা খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পাবেন বলে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, এফবিসিসিআই সদস্যদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। এটা নিয়ে প্রয়োজন হলে আবারো আলোচনায় বসব। মহামারীর যে অবস্থা তাতে ১৫ দিন পর যে লকডাউন হবে না, সেটি বলা যাচ্ছে না। বিশ্বের অবস্থা খারাপ, পরিস্থিতি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেবে। এফবিসিসিআইয়ের দাবি মেনে নেয়ার জন্য কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ নিয়ে কোনো সময়সীমা দেয়া হয়নি।

গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাওয়া প্রতিনিধি দলে ছিলেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান, বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান, রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী পারভেজ, এমসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি কামরান রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দিন আলমগীর, মো. হাবিব উল্লাহ ডন ও এমএ রাজ্জাক খান।

এদিকে গতকালের সভা শেষে বিজিএমইএ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। এতে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। অনেক ব্যবসায়ী ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা এখনো ফিরে পাননি। বিশ্ববাজারে শিল্পের কাঁচামালের মূল্য ও জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি দেশের প্রধান রফতানি শিল্পে প্রভাব ফেলেছে। তাছাড়া ব্যবসা যখন ফিরে আসার পথে রয়েছে, তখন আবার নতুন করে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট রফতানিকারকদের মধ্যে উত্কণ্ঠার সৃষ্টি করছে। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসার পুনরুদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবসায় আর্থিক নীতিসহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য ফারুক হাসান অনুরোধ জানান।

প্রসঙ্গত, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে ঋণের কিস্তি পরিশোধে ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। নজিরবিহীন ছাড়ের কারণে গত বছরজুড়ে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি হওয়া থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ঋণগ্রহীতারা। চলতি বছরেও প্রদেয় কিস্তির ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলে খেলাপি থেকে ব্যাংকের গ্রাহকদের ছাড় দেয়া হয়েছিল। তবে চলতি বছরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে কোনো ঋণের ২৫ শতাংশ অর্থ আদায় না হলে সে ঋণ সুবিধাবঞ্চিত হবে বলে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে কোনো গ্রাহক প্রদেয় কিস্তির ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করলে সে ঋণ নিয়মিত থাকবে। এ সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে আরোপিত সুদ আয় খাতে হস্তান্তর করা যাবে। তবে চলতি বছরের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে প্রদেয় কিস্তির ২৫ শতাংশ অর্থ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে সেটি ডিসেম্বর-২০২১ ভিত্তিক শ্রেণীকরণ করতে হবে।

একই প্রজ্ঞাপনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছিল, বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের বিপরীতে বিদ্যমান নীতিমালার আওতায় রক্ষিতব্য সাধারণ সঞ্চিতির অতিরিক্ত আরো ২ শতাংশ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে। এ ধরনের সঞ্চিতিকে স্পেশাল জেনারেল প্রভিশন কভিড-১৯ হিসেবে স্থানান্তর করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত রক্ষিত এ সঞ্চিতি অন্য কোনো খাতে স্থানান্তর করা যাবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের জারীকৃত এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি সংশোধনের দাবি জানায় এফবিসিসিআই। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিকল্প তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এর প্রথম প্রস্তাবটি হলো ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অন্যান্য শিল্প এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের বকেয়া ঋণের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা বা তার চেয়ে কম হলে সেটি পরিশোধের ক্ষেত্রে প্রদেয় কিস্তির কোনো প্রকার ডাউন পেমেন্ট না দিলেও মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে শ্রেণীকরণ না করে ঋণ হিসাবটি পুনঃতফসিলকৃত বলে গণ্য করা।

ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ১০ কোটি থেকে ৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত প্রকল্প ঋণ গ্রহণকারী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ২ শতাংশ পরিশোধ করা হলে সে ঋণ বিরূপ বা মন্দমানে খেলাপি না করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল এফবিসিসিআই থেকে। ৫০০ কোটি টাকার অধিক প্রকল্প ঋণ গ্রহণকারী শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠনের প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ১ শতাংশ পরিশোধ করা হলে সে ঋণও খেলাপি হিসেবে বিবেচনা না করার প্রস্তাব দেয় সংগঠনটি। তিনটি প্রস্তাবই ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মেনে নেয়ার দাবি জানায় এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঋণ মন্দমানের খেলাপি না করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আদায়কৃত অতিরিক্ত সুপারভিশন চার্জ ফেরত দেওয়ার নির্দেশ
স্বতন্ত্র পরিচালকের যোগ্যতা-বেতন কত জানালো কেন্দ্রীয় ব্যাংক
আমদানি পণ্যের মূল্যসহ অতিরিক্ত তথ্য দিতে হবে