২২ বছর পূর্তিতে বাংলাকে সম্মান জানিয়ে বাংলাভাষায় ব্যাংকিং লেনদেন চালু করছে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। আগামী ১৬ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাংকিং সেবা চালু করা হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আরফান আলী।
অনুষ্ঠানে আরফান আলী বলেন, ব্যাংক এশিয়া এসএমই সেবা যাত্রা শুরু করে ২০০৭ সালে। বর্তমানে সব শাখা ও এজেন্ট আউটলেট থেকে গ্রাহকবৃন্দকে এসএমই সেবা প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত সুবিধাপ্রাপ্ত গ্রাহকের সংখ্যা ১৮ হাজার ৫০০ এর বেশি। এসএমই ঋণের পরিমাণ তিন হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। বিগত কয়েক বছর ধরে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে গ্রাহক ও ঋণের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করছি। পর্যায়ক্রমে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও রিটেইল খাতের পোর্টফোলিও ৫০% এ উন্নীত করা হবে। একই সাথে ৯ শতাংশ সুদে আগামী বছর প্রতি দিন ৫০০ ক্ষুদ্র গ্রাহককে ঋণ বিতরণ করা হবে, যা এজেন্টদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পল্লী এবং প্রান্তিক অঞ্চলে কটেজ, মাইক্রো এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানের জন্য শাখার পাশাপাশি এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলকে ব্যবহার করা হবে। ইসলামী ব্যাংকিং একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেখানে আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে এ খাতে ডিপোজিট গ্রাহক দুই লাখ ২৭ হাজার ৫৬৫ জন এবং ইনভেস্টমেন্ট গ্রাহক দুই হাজার ৩৫১ জন। ডিপোজিটের পরিমাণ দুই হাজার ৪১২ কোটি টাকা এবং ইনভেস্টমেন্ট এক হাজার ৭২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ব্যবসায়িক লেনদেনকে আরো সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে ভার্চুয়াল কারেন্সি (ট্রেড ক্রেডিট) প্রচলন করতে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে এজেন্ট আউটলেট স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যাত্রা শুরু। এখন পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং পয়েন্ট ৪ হাজার ৯৮২ এর মধ্যে ডিজিটাল পোস্ট অফিস ৮৭৪টি, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পয়েন্ট ৩১৮২টি, সিটি ডিজিটাল সেন্টার ৪১টি, পাসপোর্ট ১৬টি, ব্যক্তিক ও ইনস্টিটিউশনাল ৮৬৯টি। এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহক সংখ্যা ৪৬ লাখের বেশি। ডিপোজিটের পরিমাণ তিন হাজার ১৭১ কোটি টাকার বেশি।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, রেমিট্যান্স সেবার পরিধি বাড়ানো ও রেমিট্যান্স সেবাকে গ্রাহকের জন্য আরো সহজতর করার লক্ষ্যে ইউরোজিরোর সাথে পার্টনারশিপে কাজ শুরু করেছে ব্যাংক এশিয়া। ইউরোজিরো একটি পেমেন্ট প্লাটফর্ম যেখানে বিশে^র ৬০ টিরও অধিক পোস্টাল অফিস, ব্যাংক, আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সংযুক্ত হয়ে ‘ক্রস বর্ডার’ রেমিট্যান্স সেবা দিয়ে থাকে। আমরা এ প্লাটফর্মে সংযুক্ত হয়ে দেশের ডিজিটাল পোস্ট অফিসের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে মানুষের দোরগোড়ায় রেমিট্যান্স সেবা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবো। এ প্রক্রিয়ায় ইউরোজিরোর পোস্টাল পে-অ্যাপস ব্যবহার করে প্রেরক বাসায় বা অফিসে রেমিট্যান্স প্রেরণ করতে পারবে এবং সুবিধাভোগী নিকটস্থ ডিজিটাল ডাকঘর থেকে সহজেই রেমিট্যান্স উত্তোলন করতে পারবে।
আরফান আলী বলেন, আমরা রিয়েল টাইম রেমিট্যান্স পেমেন্ট সলিউশনের জন্য নতুন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছি। ভয়েস ব্যাংকিং সেবা চালুর লক্ষ্যে আমরা হিসাব টেকনোলজির সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হিসাবের কারিগরি সহযোগিতায় চালুকৃত ভয়েস ব্যাংকিংসেবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কর্তৃক চালিত কথোপকথন ইঞ্জিন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাবধারীর কণ্ঠস্বর চিহ্নিত করে এবং ফোন কলের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যাংকিংসেবা দেয়। ভয়েস ব্যাংকিংসেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে, গ্রাহকের ফোনে কোনোরকম ইন্টারনেট সংযোগ কিংবা অ্যাপস ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। এটিই প্রথম কথোপকথন ইঞ্জিন যা বাংলা ভাষায় নির্দেশনা বুঝতে সক্ষম।