ঢাকা বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
সাসটেইনেবল রেটিং ২০২০:শীর্ষ ব্যাংক ও এনবিএফআই এর তালিকা প্রকাশ
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৮-১৫ ০২:৫৪:৩১

দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) সাসটেইনেবল রেটিং ২০২০ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত চারটি সূচকের ওপর ভিত্তি করে এই মান যাচাই করা হয়েছে। এগুলো হলোঃ

(১) টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক (সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স ইন্ডিকেটর)

(২)সবুজ পুনঃ অর্থায়ন (গ্রিন রিফাইন্যান্স)

(৩) সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) ও

(৪) মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা (কোর ব্যাংকিং সাসটেইনেবেলিটি)।

সাসটেইনেবল রেটিংয়ে শীর্ষে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) লিমিটেড। তালিকায় থাকা শীর্ষ এনবিএফআইগুলো হচ্ছে হজ ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেড, সৌদি বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (সাবিনকো) ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লিমিটেড।

ব্যাংকগুলোকে সুশাসন, শুদ্ধাচার ও সামাজিক দায়বদ্ধতা পালনে অনুপ্রাণিত করতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিংয়ের শীর্ষ ১০ ব্যাংকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, সিএসআর ব্যয়, গ্রিন ফাইন্যান্স, কোর ব্যাংকিং কার্যক্রম, খেলাপি ঋণের হারসহ বেশকিছু সূচকের ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের সহযোগিতায় সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ রেটিংটি তৈরি করেছে। ব্যাংকের পাশাপাশি ২০২০ সালের রেটিংয়ে শীর্ষ পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। আশা করছি, এ রেটিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে শুদ্ধাচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনুপ্রাণিত হবে। পাশাপাশি সিএসআর ব্যয় ও গ্রিন ফাইন্যান্সে আরো বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ থেকে দেশের সব তফসিলি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি একটি সার্কুলার জারি করা হয়। এতে সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স পলিসির  নির্দেশনা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) ভিত্তিতে সাসটেইনেবিলিটি রেটিং প্রণয়নের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।

রেটিংয়ের ক্ষেত্রে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার হয়েছে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশক, সবুজ পুনঃ অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম ও মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা। এর মধ্যে টেকসই অর্থায়ন নির্দেশকের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ অর্থায়ন, ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, গ্রামীণ অর্থায়ন, নারী ঋণগ্রহীতার সংখ্যা, কৃষিতে টেকসই অর্থায়ন, সবুজ অর্থায়নের ক্যাটাগরি ও প্রকল্পের পরিমাণ, ক্ষুদ্র ও অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন, টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে খেলাপি ঋণ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সবুজ ব্যাংকিংয়ের চর্চাকেও এ মানদণ্ডের অন্যতম নির্ধারক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল ব্যাংকিং কার্যক্রমের টেকসই সক্ষমতা নির্ধারণ করা হয়েছে মোট খেলাপি ঋণের হার, ঝুঁকিভারিত সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত, লিকুইডিটি কাভারেজ রেশিও, নেট স্টেবল ফান্ডিং রেশিও, কোর রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট, সম্পদের বিপরীতে আয়, ইকুইটির বিপরীতে আয়, নিট ইন্টারেস্ট মার্জিন ও এফিসিয়েন্সি রেশিওর মতো বিষয়গুলোর ভিত্তিতে।

সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ও জলবায়ু ঝুঁকি তহবিলের অনুদানের অর্থ ব্যয়ের মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় এসেছে। পাশাপাশি সবুজ পুনঃ অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর পারফরম্যান্স বিবেচনা করা হয়েছে বার্ষিক পুনঃ অর্থায়নের হার, খাত ও পণ্যভিত্তিক পুনঃ অর্থায়নের পাশাপাশি গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের ডলার ও ইউরো কম্পোনেন্টের ভিত্তিতে।

জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবেশবান্ধব প্রকল্প, সৌরবিদ্যুৎসহ জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয় না, এমন প্রকল্পে অর্থায়ন করেছি। এর ফলে টেকসই ব্যাংকিংয়ের তালিকায় আমাদের ব্যাংকের নাম উঠেছে। এই স্বীকৃতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ধন্যবাদ।’

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সবুজ অর্থায়ন কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, গত বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০৪ কোটি টাকা সবুজ অর্থায়ন করেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড। তালিকায় এর পরের অবস্থানে রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ (৫৯৫ কোটি টাকা), এক্সিম ব্যাংক (৫০২ কোটি), ব্র্যাক ব্যাংক (৪২১ কোটি), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক (১৪২ কোটি), ব্যাংক এশিয়া (১২২ কোটি), আইএফআইসি ব্যাংক (১০৭ কোটি), এনআরবি ব্যাংক (৬৫ কোটি), মার্কেন্টাইল ব্যাংক (১৮ কোটি) ও বেসিক ব্যাংক (১৩ কোটি টাকা)। ব্যাংকগুলো তাদের মোট বিতরণকৃত ফান্ডেড মেয়াদি ঋণের ১০ শতাংশের বেশি অর্থ সবুজ অর্থায়ন করেছে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড (বিআইএফএফএল) বিতরণকৃত মোট ফান্ডেড মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশের বেশি অর্থ সবুজ অর্থায়ন করেছে।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ মুনিরুল মওলা বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইসলামী ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে বড় অংকের অর্থ ব্যয় করে থাকে। শুরুর দিকে সদকা তহবিল নামে আমরা সিএসআর ব্যয় করতাম। পরে এ তহবিলের নাম পরিবর্তন করে ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন রাখা হয়েছে। এ ফাউন্ডেশনের অধীনে আমরা সারা দেশে সেবামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছি। সিএসআরের বাইরে কেবল ইসলামী ব্যাংকের জাকাত ফান্ড নামে একটি তহবিল আছে। প্রতি বছরই আমরা ইসলামী শরিয়াহ অনুসরণ করে জাকাত ফান্ডের অর্থ বিতরণ করছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খোন্দকার মোরশেদ মিল্লাত বলেন, ‘২০২০ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে প্রথমবারের মতো এই মান প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর পাঠানো তথ্য ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৮টি বিভাগের তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে এই মান নির্ধারণ করা হয়েছে।’

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, যেসব ব্যাংক পুরোনো ও সবুজ প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে, এই তালিকায় তারাই এগিয়ে গেছে। তবে এই মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে একটি ব্যাংকের পুরো আর্থিক চিত্র প্রকাশ পায়নি।

সুদহার ১৪ শতাংশের ওপরে যেতে দেওয়া হবে না
বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা চাকরি ছাড়লেন
ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বেচ্ছায় একীভূত হতে পারবে ব্যাংক