লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি কমিয়ে আনতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। শুধু তাই নয়, আদায় করা যাচ্ছে না অবলোপনকৃত ঋণ। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অবলোপনকৃত ঋণের আদায়ের হার ৬৪ শতাংশ। গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে (জুন শেষে) রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত মন্দ ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৪২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির (এপিএ) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী গত জুন শেষে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা। চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি কমিয়ে আনতে পারেনি ব্যাংকগুলো। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় স্থিতির পরিমাণ ১৬২ কোটি ১৮ লাখ টাকা বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলেও গত ছয় মাসে ব্যাংকগুলোর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা কমেছে।
গত ডিসেম্বর শেষে ছয় ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি ছিল ১৭ হাজার ৪৮৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। জানা গেছে, এপিএ চুক্তি অনুযায়ী, সমাপ্ত অর্থবছরে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো আদায় করেছে ১৩২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, একমাত্র বিডিবিএল ছাড়া অপর পাঁচটি ব্যাংকে অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি সবচেয়ে বেশি সোনালী ব্যাংকে। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে অগ্রণী ও জনতা ব্যাংক। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে একমাত্র জনতা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছে। আদায়ে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে বেসিক ব্যাংক।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপিএর আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে সোনালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ছয় হাজার ৯২০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে গত জুন শেষে সোনালীর অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে এপিএর আওতায় গত অর্থবছরের অবলোপনকৃত ঋণ থেকে ব্যাংকটির আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৩৯ কোটি টাকা।
এপিএর আওতায় জনতা ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫০১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে জনতার আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে অগ্রণীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৪০ কোটি টাকা।
বিডিবিএলের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৫৪৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বিডিবিএলের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।
রূপালী ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫৯৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে রূপালীর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা।
এপিএর আওতায় বেসিক ব্যাংকের অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ব্যাংকটির অবলোপনকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৪৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে অবলোপনকৃত ঋণ থেকে বেসিকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায়ের পরিমাণ হচ্ছে ৮০ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে এপিএ চুক্তি পর্যালোচনা করে দেখা হবে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারছে কি না। তারপরই এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।