ঢাকা শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪
নতুন পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি নেই !
  • ব্যাংকবীমাবিডি
  • ২০২১-০৫-২১ ০১:২০:০১

বাংলাদেশের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের বিতর্কিত দেশ ইসরাইলের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। ঘোষণা দিয়েই তা জানানো হয়েছিল। এজন্য স্বাধীনতার পর ইসরাইলের স্বীকৃতিও গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। এতে বাণিজ্যিক সম্পর্কও স্থাপিত হয়নি। ফলে বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী কেউ ইসরাইল ভ্রমণ করতে পারেন না। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হচ্ছে। ফলে এখন থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরাইল ভ্রমণের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের ইস্যুকৃত পাসপোর্টের প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা ছিল ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ (বিশ্বের যেকোনো দেশের জন্য এই পাসপোর্ট কার্যকর থাকবে, শুধু ইসরাইল ছাড়া)। অর্থাৎ বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী কোনো ব্যক্তি শুধু ইসরাইল ব্যতিরেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ ভ্রমণ করতে পারবেন।

যদিও বর্তমানে নতুন ইস্যু করা ও মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট নবায়নের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়ার বিষয়টি দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি এমন বেশকিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। পাসপোর্ট গ্রহণকারীরা জানান, গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে ইস্যু করা নতুন ই-পাসপোর্টে লেখা রয়েছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। এখানে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি নেই। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

নতুন পাসপোর্ট পাওয়া আরিফ হাসান (ছদ্মনাম) জানান, সম্প্রতি তিনি ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে তিনজনের

ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ঈদুল ফিতরের আগে সে নিজের পাসপোর্ট পান। আর ঈদের পরে তার মা ও ছোট ভাই পাসপোর্ট পেয়েছেন। তার পাসপোর্ট আগের মতোই থাকলেও ঈদের পরে পাওয়া পাসপোর্ট দুটিতে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ শব্দ দুটি লেখা নেই। তিনি এ বিষয়ে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরাইল’ না থাকলেও কোনো সমস্যা হবে না।

পাসপোর্ট থেকে ইসরাইল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক আগে যেরকম ছিল এখনও তা-ই থাকবে। তবে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে আমরা পাসপোর্টে এক্সসেপ্ট ইসরাইল শব্দ দুটি তুলে দিচ্ছি।’

জানা গেছে, মুসলিম বিশ্বের দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সদস্য রাষ্ট্র। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইসরাইল ও ফিলিস্তিন ইস্যুটি এখনও অমীমাংসিত রয়েছে। তাই স্বাধীনতার পর থেকেই ফিলিস্তিনের পক্ষ নেয় বাংলাদেশ। এজন্য ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। এতে ইসরাইলের সঙ্গে কোনো প্রকার বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কও নেই। দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যও করতে পারেন না বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

যদিও ফিলিস্তিনে সাম্প্রতিক ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পক্ষে বাংলাদেশ তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘বাংলাদেশ যেহেতু ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি, তাই পাসপোর্টে এ কথাটি লেখা হয়। তবে পাসপোর্ট ইস্যু করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়। কাজেই এক্সসেপ্ট ইসরাইল শব্দ দুটি কেন তুলে দেয়া হলো এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবে ‘ তবে বাংলাদেশ এখনও ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় ঢাকায় তাদের দূতাবাসও নেই। কিন্তু ফিলিস্তিনের পক্ষে থাকায় ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস স্থাপনের অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ঢাকার ফিলিস্তিন দূতাবাসের হেড অব দ্য মিশন হচ্ছেন ইউসুফ সালেহ রমাদান।

ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ইসরাইলের হামলায় আহত ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় বাংলাদেশ চিকিৎসকদের একটি দল পাঠায় ১৯৭৩ সালে। সেই থেকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের যাত্রা শুরু হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে ওআইসির অধিবেশনের এক ফাঁকে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফিলিস্তিনের পক্ষে ইয়াসির আরাফাত নেতৃত্ব দেন। ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দানকারী বিশ্বের ১৩৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিনি বিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে স্পষ্ট। ফিলিস্তিনিদের স্বতন্ত্র-স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে বাংলাদেশ বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়েছে একেবারে শুরু থেকেই।

বাংলাদেশের এই অবস্থানে যে অদূর ভবিষ্যতেও কোনো পরিবর্তন আসবে, তেমন সম্ভাবনা একেবারেই দেখছেন না বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এর কারণ যতটা না আন্তর্জাতিক, তার চেয়ে অনেক বেশি বাংলাদেশের জনমত এবং আভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরুর দিকে যে কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল, তারমধ্যে ছিল ইসরাইল। ১৯৭২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ইসরাইল বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার প্রস্তাব করেছিল।

তখন স্বাধীন বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার লিখিতভাবে ইসরাইলের স্বীকৃতি প্রত্যাখ্যান করেছিল।

উল্লেখ্য, ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের প্রশ্নে মুসলিম বিশ্বে একটা নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত দেখা হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি আরব দেশ যেন ইসরাইলের ব্যাপারে তাদের বৈরী অবস্থান নমনীয় করছে। ‍

সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে চুক্তি করতে যাচ্ছে। সৌদি আরবও অলিখিত একটা সম্পর্ক তৈরি করেছে, এমন কথা শোনা যায়।

গত বছরের আগস্ট থেকে চারটি আরব দেশ ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করে। তাদের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুদান, মরক্কো ও বাহরাইন।

বিশ্লেষক বলছেন, সৌদি আরব, ওমান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো কিছু এশীয় দেশ সম্পর্ক স্থাপনের লাইনে আছে।

আমিরাতের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার পর পর্যটন, বিমান ও অর্থনৈতিক সেবাসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আরও বেশ কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। সোবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ চুক্তির মধ্যস্থতা করেছেন।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে মন্ত্রিসভার অনুমোদন
ইসি গঠনে বিল পাস
কাল থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্ধেক জনবল নিয়ে চলবে অফিস