করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছুদিন স্থবিরতা থাকলেও পরে ধীরগতিতে বিচারকাজ চালু রাখে দেশের আদালতগুলো। এর ধারাবাহিকতায় দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে অবশেষে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে বিচার কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, করোনায় ট্রাইব্যুনাল বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৩৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। এসব মামলার মধ্যে ১২টি মামলা চূড়ান্ত শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। একটি মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ।
করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে সরকার ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। প্রভাব পড়ে আদালতগুলোতেও। বিচার কার্যক্রমে দেখা দেয় ধীরগতি। পরে আইনজীবীদের আন্দোলন এবং বিচারপ্রার্থীদের কথা ভেবে বহির্বিশ্বের বেশকিছু দেশের মতো ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত চালাতে আগ্রহ দেখায় সরকার।
ভার্চুয়াল আদালত পরিচালনায় আইন সংশোধনের প্রয়োজনও দেখা দেয়। যার ধারাবাহিকতায় ‘আদালত কর্তৃক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০’ প্রণয়ন হয়। এতে করে মামলার বিচার, বিচারিক অনুসন্ধান, দরখাস্ত বা আপিল শুনানি, সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক গ্রহণ, আদেশ বা রায় প্রদানের সময় বিভিন্ন পক্ষের ভার্চুয়াল উপস্থিতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আদালতকে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষমতা দেওয়া হয়।
ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত পরিচালনার জন্য নির্ধারিত প্র্যাকটিস রুলসে সংশোধন আনে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। এরপর গত ১০ মে নিম্ন আদালতের ভার্চুয়াল কোর্টে শুধু জামিন শুনানির নির্দেশ দেয় আদালত প্রশাসন।
গত ৫ আগস্ট থেকে দেশের সকল অধস্তন আদালতে শারীরিক উপস্থিতিতে বিচারকার্য পরিচালনা শুরু হয়। এর পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও চেম্বার আদালত শুধু ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে এবং হাইকোর্ট বিভাগের ১৮টি বেঞ্চে শারীরিক উপস্থিতিতে ও ৩৫টি বেঞ্চে ভার্চুয়ালভাবে বিচার পরিচালনা শুরু হয়। এরপরও বিচার প্রক্রিয়া থমকে থাকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে গড়ে তোলা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের।
দীর্ঘদিন বিচারকার্যক্রম বন্ধ থাকায় অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের এক আইনজীবী মো. আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। তিনি জানান, ট্রাইব্যুনালে যেসব আসামির বিচার চলছে তাদের সকলেই বয়স্ক। এদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সুবিধা ট্রাইব্যুনালের আদেশ ছাড়া দেওয়ার সুযোগ ছিল না। ফলে এক ধরনের বিড়ম্বনার সৃষ্টি হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিশেষ আইন দ্বারা গঠিত হওয়ায় এতদিন বিচার কার্যক্রম শুরু করতে বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা ছিল। তাছাড়া মামলার আসামি, সাক্ষীদের অনেকেই বয়স্ক। তাই করোনার মাঝে সবার কথা বিবেচনায় নিয়ে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য চলবে।
আগামী ২৭ ও ২৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে মামলার তারিখ নির্ধারণ রয়েছে।