গ্রাহকের পক্ষে আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ব্যবহৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। ফলে গত দুই কার্যদিবস এক ব্যাংকের শাখার মাধ্যমে অন্য ব্যাংকের চেক দিয়ে টাকা সংগ্রহ করতে পারছেন না গ্রাহকরা। এতে অনেক গ্রাহকই ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে পারেননি ভোগান্তিতে পড়েন। বিশেষ করে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের চলতি হিসাবে বিভিন্ন ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন হয়ে থাকে।
গত ১৩ ও ১৫ এপ্রিল দুই দিন এ সমস্যা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারে। গতকালও লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত সার্ভারের ত্রুটির সমাধান হয়নি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব প্রযুক্তিবিদ ও ভেন্ডর যৌথভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে। গত তিন দিন ধরেই দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আগামী রোববারের মধ্যে সার্ভারের ত্রুটির সমাধান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা প্রকাশ করেছেন।
আন্তঃব্যাংক লেনদেন প্রক্রিয়াটি সমাধান হয় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউসের (ব্যাচ) সার্ভারের মাধ্যমে। কোনো ব্যাংকের গ্রাহক ভিন্ন কোনো ব্যাংকের চেক নিজ হিসাবে জমা দেয়ার পর তা ব্যাচের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। অর্থাৎ চেকের একটি ছবি সার্ভারের মাধ্যমে ব্যাচে জমা দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকাশ ঘরের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে থাকা চেক ইস্যুকারী গ্রাহকের হিসাব থেকে টাকা কেটে চেক জমাদানকারী ব্যাংকে পাঠানো হয়। এখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূলত সমন্বয়কারী ও নিরাপত্তার কাজটি করে থাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সেবা-ফির মাধ্যমে। এতে পূর্বের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম সময়ে লেনদেনটি সম্পন্ন হয়। পুরো প্রক্রিয়াটি চেক ক্লিয়ারিং নামে পরিচিত।
জানা গেছে, গত ১৩ এপ্রিল থেকে গ্রাহকদের চেক ক্লিয়ারিং বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারিগরি ত্রুটির কারণে ব্যাচ কাজ করছে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ দিন-রাত পরিশ্রম করছে। আশা করছি আগামী রোববারই সমাধান হয়ে যাবে।
সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটির জন্য আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সীমিত পরিসরে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে তখন উল্লেখ করা হয়, ‘জরুরি আন্তঃব্যাংক লেনদেন সম্পন্নের সুবিধার্থে সরকার ঘোষিত সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সময় বাংলাদেশ অটোমেটেড ক্লিয়ারিং হাউস (বিএসিএইচ) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বয়ংক্রিয় নিকাশ ঘরের কার্যক্রমও সীমিত পরিসরে চালু থাকবে।’ কিন্তু কারিগরি ত্রুটিতে সেবাটি বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, বর্তমানে অর্থাৎ লকডাউন চলা পর্যন্ত ক্লিয়ারিংয়ের জন্য পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত চেক বেলা ১১টার মধ্যে পাঠাতে হবে ব্যাচে। এসব চেক স্বয়ংক্রিয়ভাবে দুপুর ১২টার মধ্যে নিষ্পত্তি হবে। অন্য যেকোনো চেক পাঠানো যাবে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত, যা নিষ্পত্তি হবে বেলা ১টার মধ্যে।
এদিকে গতকাল ব্যাংকপাড়া মতিঝিল এলাকায় ব্যাংকগুলোতে অর্থ উত্তোলনে তেমন একটা চাপ দেখা যায়নি গ্রাহকদের। ব্যাংক খোলা থাকলেও গ্রাহক উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা বলেছেন, লকডাউনে ব্যাংক বন্ধ থাকবে, এমন ঘোষণায় গ্রাহকরা অর্থ তুলে নিয়েছেন ১৩ তারিখেই। দিনটিতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুণ বেশি লেনদেন হয়েছিল। লকডাউনে যানবাহন, দোকানপাট বন্ধ থাকায় মানুষের চলাচল কম। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ব্যাংকে আসছেন না।
আগামী ২১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি চলাকালীন সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া ব্যাংকগুলোতে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত লেনদেন চলবে। দাপ্তরিক কাজের জন্য ব্যাংক খোলা থাকবে আড়াইটা পর্যন্ত। সিটি করপোরেশন এলাকায় দুই কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ব্যাংকগুলোর একটি শাখা খোলা থাকবে। অন্যদিকে জেলায় সদর শাখা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিটি ব্যাংকের একটি শাখা সপ্তাহের রোববার, মঙ্গলবার ও বৃহস্পতিবার খোলা রাখতে হবে। এছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যিক শাখাগুলো নিয়মিত খোলা থাকবে।