রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের ২০২০ সালের জন্য বকেয়া ঋণ থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল এক হাজার ৮৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয় মাত্র ৮৫৩ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৪৬ দশমিক ১০ শতাংশ। অর্থাৎ বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্ধেকও আদায় করতে পারেনি ব্যাংকগুলো।
মান উন্নয়নের জন্য প্রতি বছর অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। বছর শেষে বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। মান উন্নয়নের জন্য প্রতিবছরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ব্যাংকের বিভিন্ন সূচক, বিশেষ করে নি¤œ মানে থাকা খাতগুলোর জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের জন্য চার ব্যাংকই পৃথকভাবে এমওইউ স্বাক্ষর করে। সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর বার্ষিক অগ্রগতি নিয়ে একটি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে দেখা যায়, সামষ্টিকভাবে বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায়ের হার অর্ধেকেরও কম। সোনালী ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয় ৪৩৪ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৫৭ শতাংশ। অথচ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয় মাত্র ১৩৩ কোটি টাকা। আদায়ের হার ২৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। অথচ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।
অগ্রণী ব্যাংক ৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় করতে পেরেছে মাত্র ২০৫ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৫১ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬২২ কোটি টাকা।
ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আদায়ের হার একটু কম হলেও পরিমাণের দিক দিয়ে কিন্তু বড়। করোনা পরিস্থিতি এর জন্য কিছুটা দায়ী। অর্থনীতি এখন স্বাভাবিক পথে এগোচ্ছে। আগামী বছরে কীভাবে আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়ে আমরা ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধ করছি।’
এছাড়া অপর রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া ছিল ২০০ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে আদায় হয়েছে মাত্র ৮১ কোটি টাকা। আদায়ের হার ৪০ শতাংশ। অথচ গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৯৭২ কোটি টাকা।
গত ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে দুই লাখ দুই হাজার ৩৩০ কোটি টাকা। মধ্যে খেলাপিতে পরিণত হয়েছে ৪২ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর অর্থাৎ ২০২০ সাল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ হাজার কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত মোট ঋণের সাত দশমিক ৬৬ শতাংশ। এ সময়ে ঋণ বিতরণের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিভিন্ন সূচক সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নি¤েœ রয়েছে, যা সাধারণ মানদণ্ডেও গ্রহণযোগ্য নয়। উচ্চহারের খেলাপি ঋণ নিয়ে জর্জরিত হয়ে পড়ছে ব্যাংকগুলো। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংকগুলোর মূলধন সংরক্ষণে। পরিস্থিতি উন্নয়নে কয়েক বছর ধরেই প্রতি বছর চুক্তি করছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। কিন্তু বছর শেষে সেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারছে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মনে করেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সরকারের বিভিন্ন সেবা দেয়ার পাশাপাশি বড় ঋণ বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে অর্থনীতিতে। এজন্য বড় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আরও দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এজন্য ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ মুক্ত করা জরুরি হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে পেশাদার ব্যাংকারদের আনতে পারলে উচ্চ হারের খেলাপির তকমা থেকে বের হতে পারবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।