অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা পিছু ছাড়ছে না রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর। ব্যাংকের শাখাগুলো থেকে সেই আগের মতোই এখনও যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ দিয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মকর্তারা আশ্রয় নিচ্ছেন জাল-জালিয়াতির। বিভিন্নভাবে এসব অন্যায় ধামাচাপা দিয়ে আসছেন তারা। তবে এ বছর নতুন করে করোনা অজুহাত দেখানোর সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছেন। তাই সার্বিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যাংকের লোকসানি শাখা। এতে রাষ্ট্র মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী এই চার ব্যাংকের নাজুক অবস্থা কাটছে না। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে ২০টি।
বছরের পর বছর লোকসানের বোঝা টানতে থাকা এ শাখাগুলো কমানোর কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ, মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি কমাতেও নজর দেয়ার কথা বলেছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক এ সংস্থা। আর চলমান ইস্যু হিসেবে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজগুলো যথানিয়মে এবং দ্রুততার সঙ্গে শতভাগ বাস্তবায়নের তাগিদ দেয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যনুযায়ী, ‘রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মধ্যে লোকসানি শাখা বেড়েছে ৩টির। এর মধ্যে রয়েছে জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। তবে লোসকানি শাখার সংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে উল্টো চিত্র সোনালী ব্যাংকের। এবার সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকের লোকসানি সংখ্যা ছিল ২৭টি। তবে ২০২০ সাল শেষে মোট এক হাজার ২২৬টি শাখার মধ্যে লোকসানে রয়েছে ২০টি শাখা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানের এ ব্যাংকটির লোকসানি শাখা কমেছে ৭টি।
অন্যদিকে জনতা ব্যাংকের মোট লোকসানি সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১টিতে। এক বছর আগে এ সংখ্যা ছিল ৫০টিতে। তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে এ ব্যাংটির মোট শাখা ৯১৬টি। সরকারি চার ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের লোকসানি শাখার সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। এক বছরের ব্যবধানে ১৮টি থেকে ৩৪টিতে পৌঁছেছে ব্যাংকের লোকসানি শাখা। শতকরা হিসাবে এ হার ৮৯ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট শাখা ৯৬০টি।
এছাড়া রূপালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে ৩টি। ২০২০ সালে ব্যাংকটির মোট লোকসানি সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪টি। এক বছর আগে (২০১৯) এ সংখ্যা ছিল ১১টি। হিসাব বলছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত এ চার ব্যাংকের মোট শাখার সংখ্যা ৩ হাজার ৬৮৫টি। এর মধ্যে লোকসানে রয়েছে ১১৯টি শাখা। এক বছর (২০১৯) আগে যার সংখ্যা ছিল ১০৬টি।
এর আগে সদ্য বিদায়ী মাসের শেষ দিকে (২৫ মার্চ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি এবং লোকসানি শাখা কমিয়ে আনার পরামর্শ দেয়। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর প্রধান সমস্যা মূলধন ঘাটতি। তারা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিশেষ ছাড় চেয়েছে। কারণ হচ্ছে সরকার আর মূলধন ঘাটতি পূরণে সহায়তা করছে না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, পার্পেচুয়াল বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে। এর মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ সম্ভব। রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা, সোনালী, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে মূলধন সংকট। অন্যান্য আর্থিক সূচকের চেয়ে এটিই প্রধান সমস্যা। এজন্য বন্ড ছেড়ে ঘাটতি পূরণের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের ব্যাংকের রিয়েল ভিউটা তুলে ধরেছি। এতে হয়তো কিছুটা লোকসানি শাখা বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে খুব শিগগিরই তা কমে আসবে। ঋণ বিতরণ কম হওয়ার কারণেই লোকসান বেড়েছে। কারণ ঋণের সুদ থেকে আয় কম ও ডিপোজিট বা আমানত বেড়েছে এই পরিস্থিতির মধ্যে। ব্যাংকের এডি রেশিও ৫৬ থেকে ৫০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। ইতোমধ্যে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম বৃদ্ধির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ঋণ বিতরণ বাড়লে আগামীতে এটা অনেকাংশেই কমে আসবে।’
তিনি বলেন, ‘কভিড-১৯ আসায় আমাদের আয়ের চেয়ে ব্যয়ের হিসাবটা বেশি হয়েছে। এখন সবার স্বাস্থ্যের বিষয়টা আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। যেখানে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মাল মিটার, সিকিউরিটিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল। এতে খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি।’