বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক চলতি দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুলকে সরিয়ে দিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তা নিশ্চিত করেছে ব্যাংকটি।
এর আগে গত মঙ্গলবার এ এস এম বুলবুলকে এমডির পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য ন্যাশনাল ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, সম্প্রতি ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যুর পর ব্যাংকের পরিচালনা নিয়ে পরিচালকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করা অতিরিক্ত এমডির কাজ করা নিয়ে এই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের দফায় দফায় নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
জানা গেছে, গত সোমবার ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর চিঠি পাঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে গত বছরের ২৬ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিত সব পর্যদ ও নির্বাহী কমিটির সভার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী পাঠাতে বলা হয়। আলোচ্য সময়ে ব্যাংক কর্তৃক যেসব ঋণ অনুমোদন ও বিতরণ করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্যসহ তালিকা চয়য় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এ সময়ে ব্যাংকটির পর্যদ বা নির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত না হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া সব ঋণের মঞ্জুরি ও বিতরণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ন্যাশনাল ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম বুলবুল ব্যাংকের কর্মরত আছেন কি না, থাকলে তার সমর্থনে নথিপত্র সরবরাহ করা কিংবা না থাকলে তাকে ব্যাংকের সব দ্বায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখার নির্দেশ দেয়া হয় চিঠিতে।
এর বাইরেও চিঠিতে রংধনু বিল্ডার্স, দেশ টিভি, রূপায়ণ ও শান্তা এন্টারপ্রাইজের দেয়া সব ঋণের নথিপত্র (ঋণ আবেদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত) এবং সব ঋণের পূর্ণাঙ্গ হিসাব বিবরণী দিতে বলা হয়।
এক দিন পর গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান বরাবর আরেক চিঠিতে বলা হয়, ‘এ এস এম বুলবুলকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যাংকের ব্যাবস্থাপনা পরিচালকের (চলতি দ্বায়িত্ব) দায়িত্ব পালন থেকে অবিলম্বে বিরত রাখার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো।’
গত বুধবার ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী এ এস এম বুলবুলকে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব পালন থেকে বিরত রাখেন। এ বিষয়টি গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকে লিখিতভাবে জানিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক।
এদিকে, রংধনু বিল্ডার্স, দেশ টিভি, রূপায়ন হাউজিং ও শান্তা এন্টারপ্রাইজের দেয়া সব ঋণের তথ্য প্রদান করেছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটির দাবি রংধনু বিল্ডার্স ও শান্তাকে কোনো ঋণ দেয়া হয়নি। রূপায়ন হাউজিংকে ২০১৬ সালের দেয়া ঋণের পরিমাণ প্রায় ২৩০ কোটি টাকা। এছাড়া, দেশ টিভির কাছে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ঋণ আছে ন্যাশনাল ব্যাংকের।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ন্যাশনাল ব্যাংকের কাছ থেকে চিঠির জবাব পেয়েছি। বিষয়টি যাচাই-বাছায়ের পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।’