দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করার পর আজ থেকে অর্ধেক আসন খালি রেখে গণপরিবহন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে গতকাল থেকেই ট্রেনের ধারণক্ষমতার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করতে শুরু করেছে। তাতে ট্রেনের ভাড়া না বাড়লেও নগর পরিবহনের বাসের ভাড়া এখনকার তুলনায় ৬০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ায় সোমবার সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।
ওই নির্দেশনা পাওয়ার পর সোমবার সন্ধ্যায় বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ে ভাড়া পুনর্নির্ধারণ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয়। সেখানেই আসন খালি রাখা ও ভাড়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয় বলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান।
এর আগে গত বছর ১ জুন থেকে যেভাবে গণপরিবহনে যাত্রী বহন করা হয়েছিল, আজ থেকে সেভাবেই চলবে। বাসের অর্ধেক আসন খালি থাকবে, ভাড়া বাড়বে ৬০ শতাংশ বলে জানান নুর মোহাম্মাদ মজুমদার।
আপাতত দুই সপ্তাহের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বুধবার থেকে দেশের সকল গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী নেয়া সাপেক্ষে ৬০ পারসেন্ট ভাড়া বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ভাড়া আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’
তিনি বলেন, অর্ধেক আসন খালি রাখার পাশাপাশি গণপরিবহনে সবার মাস্ক পরা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। গণপরিবহনের মালিক শ্রমিকদের এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, গতকাল থেকেই ট্রেনের আসনসংখ্যার অর্ধেক ফাঁকা রেখে টিকিট বিক্রি শুরু করেছেন তারা। সকল ট্রেনে যে কয়টি আসন আছে, তার অর্ধেক টিকিট বিক্রি করা হবে। আর আন্তঃনগর ট্রেনের কিছু অগ্রিম টিকিট বিক্রি আছে। তা যদি ৫০ শতাংশের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে কিছু করার নেই। কিন্তু এখন থেকে আর ৫০ শতাংশের বেশি টিকিট বিক্রি করা হবে না।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এর আগে গত বছরের ৩১ মে একই নিয়ম চালু করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। তখনও ৫০ শতাংশ টিকিট বিক্রি হচ্ছিল, তবে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১৬ সেপ্টেম্বর আবার সব আসনে যাত্রী বহন শুরু হয় ট্রেনে।
নতুন করে করোনাভাইরাসের এ পরিস্থিতিতে সবাইকে সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সকালের সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব অফিস ও কারখানা অর্ধেক জনবল দিয়ে পরিচালনা করুন, উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন, জনসমাগম সীমিত করুন।
এর আগে গত সোমবার গণপরিবহনে ধারণক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা জারি করে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে করোনা প্রতিরোধে মোট ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। সেখানে এ কথা বলা হয়।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক আসন খালি রেখে এবং শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী গণপরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের এ বিষয়ে কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন।
একই সঙ্গে তিনি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা মেনে চলার জন্য দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
এখন থেকে রাজধানীসহ সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সকল সহযোগী সংগঠনের যে কোনো কার্যক্রম বাইরে না করারও নির্দেশনা প্রদান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত আকারে ঘরোয়াভাবে কার্যক্রম পালন করার আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক।