চালু হলো বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও সোনালী ব্যাংকের হিসাবে আন্তঃব্যাংক লেনদেন। ফলে ব্যাংকে না গিয়েও যেকোনো স্থান থেকে ২৪ ঘণ্টা সোনালী ব্যাংকের আড়াই কোটি গ্রাহক তাৎক্ষণিক বিকাশ অ্যাকাউন্টে আনতে পারবেন এবং বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে সোনালী ব্যাংকের হিসাবে জমা দিতে পারবেন।
বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক ও দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের যৌথ সেবা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যপূরণে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে দেশের মানুষের জীবনমানের সার্বিক উন্নয়নে এই যৌথ সেবা চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশজুড়ে সোনালী ব্যাংকের ১২২৫টি শাখার সব গ্রাহকের জন্য ব্যাংকিং লেনদেন আরো সহজ এবং সময় ও খরচ সাশ্রয়ী হলো। একইসঙ্গে বিকাশের মাধ্যমে ছোট অংকের এসব লেনদেন সুবিধা ব্যাংকের শাখাগুলোর ওপর চাপ কমিয়ে দেবে এবং বিশেষায়িত সেবার জন্য সেখানে আসা গ্রাহকদের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ তৈরি করবে।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী, সোনালী ব্যাংকের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আতাউর রহমান প্রধান এবং বিকাশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কামাল কাদীরসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন তন কর্মকর্তারা।
বিকাশ-সোনালী ব্যাংক আন্তঃসেবা পেতে প্রথম গ্রাহকের বিকাশ অ্যাকাউন্ট ও সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টের মধ্যে লিংক স্থাপন করতে হবে। লিংক স্থাপনের ক্ষেত্রে উভয় অ্যাকাউন্টের তথ্য একই হতে হবে। লিংক স্থাপন হয়ে গেলে বিকাশ অ্যাপের ‘অ্যাড মানি’র মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সহজেই বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন এবং প্রয়োজন মত ব্যবহার করতে পারবেন।
আবার ব্যাংকে না গিয়ে সোনালী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দেওয়াসহ ডিপিএস, ঋণের কিস্তি ইত্যাদি নানাবিধ সেবা বিকাশ অ্যাপের ‘ট্রান্সফার মানি’ এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই নিতে পারবেন। উল্লেখ্য অ্যাড মানি বা ট্রান্সফার মানি উভয় ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ‘ট্রানজেকশন লিমিট’ প্রযোজ্য হবে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেনের সেবাগুলো সাধারণ মানুষকে করোনাকালীন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরো বেশি সক্ষমতা দিয়েছে। একই সঙ্গে এই সেবার গুরুত্ব এবং উপযোগিতাকে আরও স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিয়েছে। বৃহত্তম দুটি সরকারি-বেসরকারি আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের এমন যৌথ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আর্থিক অর্ন্তভুক্তিসহ সব ধরনের ডিজিটাল আর্থিক সেবা নিশ্চিত করার পথকে আরও সুগম করলো।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি গঠনে সোনালী ব্যাংক এবং বিকাশের এই উদ্যোগ অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
বিকাশের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কামাল কাদীর বলেন, সোনালী ব্যাংকের মত দেশের ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক ও গ্রাহকবান্ধব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিকাশ যুক্ত হওয়ায় এখন যেকোনো সময় যেকোনো প্রান্তে উভয় প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকেরই একে অন্যের সেবা পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হল। এই যৌথ সেবায় গ্রাহকের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমাদের এই একসঙ্গে পথচলা ভবিষ্যতে ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য আরও উদ্ভাবনী সেবা আনতে সহায়তা করবে, যা দেশে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যকর ইকোসিস্টেম তৈরিতে ভূমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে সোনালী ব্যাংকের সিইও ও এমডি মো. আতাউর রহমান প্রধান বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাহকদের প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা প্রদানের মাধ্যমে সর্বোত্তম গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ঘরে বসে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন সেবা সংযুক্ত করছি। বিকাশের ডিজিটাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের এই সংযুক্তি আরো বেশি সংখ্যক এবং বৈচিত্র্যময় আর্থিক লেনদেন সেবা পাওয়ার সুযোগ তৈরি করলো।