জাতীয় সংসদের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের সদস্য পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে।সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যের সদস্য পদ শূন্য করা হয়েছে সংবিধানের ৬৬(২)ঘ এবং ৬৭(১)ঘ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। যা চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে, যেদিন কুয়েতের একটি আদালত তাকে চার বছরের কারাদণ্ড দেন।’
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালতের রায়ের কপি সংসদ সচিবালয়ে পৌঁছে।
তখন সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘শহীদ ইসলামের সংসদ সদস্যপদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রক্রিয়াটি শেষ হতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে একজন সংসদ সদস্যকে অযোগ্য ঘোষণার অনেকগুলো বিধান আছে। কোনো ব্যক্তি যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বৎসর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর সময় পার না হয়, তবে তিনি সংসদ সদস্য হওয়ার কিংবা সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না।’
জাফর আহমেদ খান বলেন, ‘যেহেতু তার (শহীদ ইসলাম) চার বছরের কারাদণ্ড হয়েছে, সংসদ এর আলোকেই সিদ্ধান্ত নেবে।’
১৯ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমরা পাপুলের বিরুদ্ধে রায়ের ৬১ পৃষ্ঠার আরবি ও ইংরেজি অনুলিপি পেয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে সংসদের স্পিকার ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সেগুলো পাঠিয়েছি। তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’
এর আগে, চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি কুয়েতে বাংলাদেশের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে অবৈধ আর্থিক লেনদেনের দায়ে চার বছরের কারাদণ্ড দেন দেশটির আদালত।
কুয়েতের সংবাদমাধ্যম দৈনিক আল কাবাস জানায়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল ওসমান রায়ে পাপুলকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানাও করেছেন।
এ ছাড়া, একই মামলায় কুয়েতের মেজর জেনারেল মাজেন আল-জারাহ ও আরেক এজেন্ট নাওয়াফ আল-মুতাইরিকেও চার বছর করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
গত বছর ৭ জুন মানবপাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলামকে কুয়েতে গ্রেপ্তার করে দেশটির অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গত বছর ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সে দেশের স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় বাংলাদেশি এমপির মানব পাচারে যুক্ত থাকার খবর বেরিয়েছিল।
কুয়েতে মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে বাংলাদেশের সাংসদ কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। এর পাশাপাশি লক্ষ্মীপুর–২ আসনের স্বতন্ত্র এই সাংসদকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার বা ৫৩ কোটি ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
কুয়েতের ফৌজদারি আদালত বাংলাদেশের সাংসদের বিরুদ্ধে এই রায় দেন। কুয়েতের আদালত ও কূটনৈতিক সূত্রে সন্ধ্যায় এ তথ্য জানা গেছে।
কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওথমান বাংলাদেশের সাংসদের পাশাপাশি সে দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তা মেজর জেনারেল মাজেন আল জারাহকেও শহিদ ইসলামের মতো চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করেন। প্রভাবশালী ওই জেনারেল বাংলাদেশের সাংসদকে অনৈতিকভাবে ব্যবসা পরিচালনায় মদদ দিয়েছিলেন।
মানব ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদকে গত বছরের ৬ জুন রাতে তাঁর কুয়েত সিটির বাসা থেকে সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা আটক করেন।
এর আগে লক্ষ্মীপুরের মানুষ সাংসদ শহিদকে দানবীর হিসেবে জানতেন। এলাকার লোকজন জানান, ১৯৮৯ সালে একটি প্রতিষ্ঠানের সুপারভাইজার (শ্রমিকদের তত্ত্বাবধায়ক) হিসেবে চাকরি নিয়ে কুয়েত যান শহিদ। তখন তিনি ছিলেন অনেকটা নিঃস্ব। ১৯৯০ সালে ইরাকের কুয়েত দখলের কারণে তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শহিদ আবার কুয়েতে যান।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মানুষকে চাকরি দেবেন বলে কুয়েতে পাঠানো শুরু করেন কাজী শহিদ। কুয়েতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আদম ব্যবসায় নামেন তিনি। মারাফি কুয়েতিয়া গ্রুপ অব কোম্পানির নামে তিনি জনশক্তি রপ্তানি শুরু করেন। একসময় এই প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন তিনি।