দিনে দিনে যানজটের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তার জ্যাম টপকে অফিস পৌঁছাতে প্রায়ই বিলম্ব হয়। আবার অনেকের অফিসে দিরীতে পৌঁছা বদ অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আপনি জানেন কি? অফিসে দেরিতে পৌঁছুনো বাড়িয়ে দিচ্ছে আপনার কাজের প্রতি অনীহা?
কর্মচারীদের বিলম্বে অফিসে হাজির হওয়া একটি বড় সমস্যা। ক্যারিয়ার বিল্ডারের ২০১৬ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে প্রতি চারজন কর্মচারীর মধ্যে একজন মাসে একবার কাজ করতে দেরি করে অফিসে পৌঁছায়, সেখানে ১৩ শতাংশ কর্মচারী বলেছেন যে এটি সাপ্তাহিক ঘটনা। উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা বলছেন যে তারা নানা ধরণের অজুহাত শুনে থাকেন ।
সম্প্রতি ইংল্যান্ডের একদল গবেষক অফিস পৌঁছনোর জন্য অতিবাহিত সময় এবং কাজের প্রতি আগ্রহের মধ্যে একটি যোগসূত্র খুঁজে পেয়েছেন, এমনটিই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন ভারতের সংবাদমাধ্যম এইসময়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “প্রতি বাড়তি এক মিনিটে কর্মীর মানসিক স্ট্রেস বাড়তে থাকে এবং কাজের প্রতি অনীহা বাড়ে।”
সমীক্ষাটিতে বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছেন, যতটা সময় ধরে কেউ অফিস পৌঁছান, তার জব স্যাটিসফেকশন ততটাই কম। অফিসের কাছে যার বাড়ি তার থেকে অনেকাংশেই কম অন্তত।
এমনকি কর্মক্ষেত্রে যেতে ২০ মিনিট বাড়তি সময় কাটিয়ে ফেললে তা কর্মীর মনে ১৯ শতাংশ বেতন কেটে নেওয়ার মতো প্রভাব ফেলে। এরফলে কাজের কোনও আনন্দ পান না কর্মচারীরা।
হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউরোপের ৬টি শহরের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষের মত, পৌঁছুতে দেরির কারণে কর্মক্ষেত্রে যে মানসিক হয়রানি তৈরি হয়, নতুন বাড়িতে শিফট করা বা ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়ার চাইতে তার পরিমাণ অনেক বেশি ।
সময় অমূল্য, এ কথা সকলের জানা। সময়ে অফিসে না পৌঁছলে বসের চোখ রাঙানি। সময়ে বাড়ি না ফিরলে পরিবারের লোকজনের গোঁসা। সব জেনেও সময়কে বশ মানানো মুশকিল। কোনও মতে নাকে মুখে গুঁজে সময়ে অফিস পৌঁছে গেলেও, ফেরা কখনই যেন সময়ে হয়ে ওঠে না।
এর প্রভাব প্রাথমিক ভাবে বুঝতে পারেন না অনেকেই। অনেকে ভাবেন, অন্যদের থেকে বেশি কাজ করছেন। কিন্তু আসল সমস্যা টাইম ম্যানেজমেন্টের। যার ফল ভুগতে হয় নিজেকেই। প্রিয়জনের সঙ্গে দূরত্ব তো আছেই, প্রতি দিনের এই সমস্যা জন্ম দিতে পারে অবসাদেরও।
অথচ একটু পরিকল্পনামাফিক ভাবে কাজ করলে গোটা ব্যাপারটা সহজেই গুছিয়ে নেওয়া যায়। এখানে রইল অফিসে টাইম ম্যানেজনেন্টের আট দাওয়াই।
সপ্তাহের শুরুতে যে কাজগুলি সারতেই হবে তার একটা তালিকা করুন। ডেস্কের পাশেই থাকুক সেই তালিকা। যে কাজগুলি সারা হয়ে যাচ্ছে, সেগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দিন।
• আসা যাক ডে টু ডে অপারেশনে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের প্রথম দু’তিন ঘণ্টার সঠিক ব্যবহার জানা খুব জরুরি। অনেকেই এই সময়টা ভুল ভাবে অপচয় করে ফেলেন। তার পরে আর গোছাতে পারেন না।
• নিজের জন্য কতটা সময় ব্যবহার করবেন ঠিক করুন। টিফিন ও সহকর্মীর সঙ্গে আড্ডার জন্য কতটা সময় ব্যয় করলে আপনার কাজ শেষ করতে সমস্যা হবে না, সেটা স্থির করুন। প্রথম কয়েক দিন ঘড়ি ধরে তা মেনে চললেই আপনার অভ্যাস তৈরি হয়ে যাবে।
• 'না' বলতে শিখুন। অনেকেই সৌজন্যের খাতিরে না বলতে পারেন না। অন্যের কাজের বোঝাও নিয়ে নেন। অফিসে এই অপেশাদারিত্বের মাসুল দিতে হয় নিজেকেই।
• ডেস্ক গুছিয়ে রাখুন। নিজের পরিপাটি বসার জায়গা অফিসে আপনাকে আরও বেশি ঝরঝরে রাখবে।
• কাজের সময়ে অন্য দিকে মন দেবেন না। নিজস্ব কেবিন থাকলে ‘ডু নট ডিস্টার্ব’ বোর্ড ঝোলান। সহকর্মীর সঙ্গে পাশাপাশি বসতে হলে প্রথম কয়েক দিন কানে হেডফোন গুঁজতে পারেন।
• মোবাইল অ্যাপে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে অ্যালার্ম সেট করুন। অ্যাপয়ন্টমেন্ট রিমাইন্ডার থাকলে শেষ মুহূর্তে হাসফাঁস অবস্থা হবে না। দিনের মাঝে একবার অ্যালার্ম বাজলে আপনি কত দূর এগোলেন তার মূল্যায়ণ করতে পারবেন সহজেই।
• সপ্তাহান্তে নিজেকে নম্বর দিন। প্রথমেই সপ্তাহে ছয় দিন ঠিক সময়ে বেরোতে পারবেন না। নিজের ওপর চাপ না বাড়িয়ে ধীরে ধীরে পারফরম্যান্সের উন্নতি করুন।
আসলে সময়মত অফিসে পৌঁছার সিদ্ধান্তটি একান্তই আপনার উপর। নিজেকে একটু পরিবর্তন করতে পারলেই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হয়ে যাবে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১