সাভারে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষক নিহত, কেউ গ্রেফতার হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার || ২০২০-১০-২৪ ০৯:৩১:৪৯

image

সাভারে ছিনতাইকারীদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষক নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম মোস্তাফিজুর রহমান (২৮)। তিনি সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর এলাকার গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন।এ ঘটনায় নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।শনিবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সাভারের শিমুলতলা এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শনিবার ভোরে বাস থেকে নেমে একটু এগিয়ে যেতেই একদল ছিনতাইকারী মুস্তাফিজকে ধরে ফেলে। সব ছিনিয়ে নিতে চায় তারা। জিনিস বাঁচাতে দৌড় দেন মুস্তাফিজ। পরে ধাওয়া করে ছিনতাইকারী দল। মুস্তাফিজের ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার পাশাপাশি তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা।শনিবার ভোরে পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে পাশের একটি বাড়ির ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরায়।

জানা যায়,  গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে আসতে বাড়ি গিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। তবে কোনো কারণে তারা আসেননি। তাই তিনি ফেরেন একাই। ভোরে গাড়ি থেকে নামার কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইকারীর হামলার শিকার হন। 

তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পায়নি পুলিশ। পরে পাশের একটি বাড়িতে সিসি ক্যামেরা দেখতে পেয়ে সেখানে যায় পুলিশ। ক্যামেরায় পুরো ঘটনাটিই রেকর্ড হয়েছে জানতে পেরে তারা রেকর্ডটি নিয়ে আসে।ফুটেজে দেখা যায়, মুস্তাফিজকে ছুরিকাঘাত করে তার কাছে থাকা কালো রঙের ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তিন যুবক। 

মুস্তাফিজুর রহমান রাজশাহী জেলার দূর্গাপুর থানার নওয়াপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে। তিনি সাভারের ডগরমোড়া এলাকায় প্্রফেসর ভিলায় ভাড়া থেকে বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুরে গ্লোরিয়াস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ নামের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে কর্মরতত ছিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান আনুমানিক ৩ বছর আগে বিয়ে করেছেন। তার ১৫ মাস বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঘটনাস্থলের আশপাশের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানায়, এ এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই রাত ৩টার পর থেকে ভোর সাড়ে ৬টা কখনোবা ৭ টা পর্যন্ত একদল চিহ্নিত ছিনতাইকারী দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করে আসছে। তাদের ব্যাপারে প্্রায়ই পুলিশের কাছে অভিযোগ করেও আশ^াসের বাণী ছাড়া তেমন কোন ফলাফল পাওয়া যায় না। এ ছিনতাইকারী চক্রটি সাভার নিউ মাকের্টের পাশে চাপাইন সড়ক থেকে শিমুলতলা এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই করে যাচ্ছে। মনে হয়, এ জায়গাটুকু তারা ইজারা নিয়ে নির্দ্বিধায় ছিনতাই করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নাইটগার্ড জানায়, পুলিশ মাঝেমধ্যে এসে আমাদের কাছ থেকে ছিনতাইকারীদের খবর নেয়। তাদের কাছে ছিনতাইকারীদের পরিচয় এবং তাদের কার্যক্রমের কথা জানালেও তেমন কোন কাজ হচ্ছে না। পুলিশ তাদের অভয়দিয়ে বলে, ফোন নম্বর দিয়ে গেলাম ছিনতাইকারী দেখলে আমাকে কল দিবা। পরে ছিনতাইকারী দেখে অনেকদিন ফোন দিয়েছি। কিন্তু স্যার ফোন ধরে অনেকদিন জানায় আজ আমার ডিইউটি নেই। আবার ডিইউটিতে থাকলেও বলে দূরে আছি, আসতেছি। তিনি আরও জানান, আমরা রাতে বাহিরে ডিইউটি করি। আমাদেরও জীবনের ভয় আছে। ছিনতাইকারীদের নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে যেকোন সময় বিপদ ঘটতে পারে। আবার ছিনতাইকারীরা মাঝেমধ্যে এসে গল্প করে, গভীর রাতে পুলিশ তাদের সঙ্গে সাভার বাসস্ট্যান্ডে হোটেলে নাস্তা খায়। তাই আমরা ভয়ে থাকি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আারও একজন নাইটগার্ড জানায়, এ এলাকায় ডগরমোড়ার আজাদ ও ইমান্দিপুরের লম্বু নয়নের নেতৃত্বে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাই হয়। এ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলো ইমান্দিপুরের দুলাল, রাজাসনের দিলু, আইচানোয়াদ্দার পারভেজ, আইচানোয়াদ্দার রাজীবসহ আরও ৩-৪ জন। তবে ২দিন আগে চাপাইনে ছিনতাই করতে গিয়ে আইচানোয়াদ্দার রাজীব জনগণের হাতে আটক হয়ে গণধোলাই খেয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর হয়েছে। সে বর্তমানে জেল হাজতে আছে।

পুলিশ জানায়, সড়কের পাশে ওই যুবকের মরদেহ দেখতে পেয়ে ‘৯৯৯’ এ ফোন করে জানায় পথচারীরা। পরে ‘৯৯৯’ এর মেসেজ পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বুকে গভীর ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।

জানা যায়, নিহত মুস্তাফিজুর রহমান গত বুধবার (২১ অক্টোবর) ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি রাজশাহী যান। আজ শনিবার তার কর্মস্থল ওই স্কুলে ছুটি শেষে যোগদানের কথা ছিল। এ কারণে তিনি গ্রামের বাড়ি থেকে আজ সাভারে এসেছিলেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী ফিলোসপি বিভাগ থেকে ২০১৭ সালে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন।

সাভার মডেল থানা পুলিশ জানায়, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার সোরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠিয়েছি। তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঘটনায় জড়িত ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টীম কাজ করছে।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১