বীমা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবির অভিযোগ

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০২-০৭ ২১:৫১:৪০

image

ঘুষ দাবিসহ নানা রকম হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বীমা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। রোববার (০৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইডরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলে ধরে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কর্তৃপক্ষ।

বীমাখাতের প্রতিষ্ঠান ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবারের ৪ পরিচালক রাখা, তহবিল অব্যবস্থাপনা, শেয়ার কেনায় ও আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম, করফাকি,মুদ্রাপাচারসহ বেশকিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ আছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইডরার।

তবে ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্সের নির্বাহী পরিচালক কামরুল আহসসান বলছেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইডরা চেয়ারম্যান তাদের হয়রানি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা আব্দুল আওয়ালের সঙ্গে ইডরার চেয়ারম্যানের কথোপকথোন তুলে ধরা হয়। এসব তথ্যপ্রমাণ জমা দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে গত ডিসেম্বরে ইডরা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করে ডেল্টা লাইফ।

ইডরা চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন সময় সংবাদকে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।ঢাকা জেলা মহানগর মুখ্য হাকিমের আদালতে ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা আব্দুল আওয়ালসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছেন ইডরা চেয়ারম্যান।

উল্লেখ্য, দেশের বীমা খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠার তাগিদে ২০১১ সালে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) গঠন করে সরকার।প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংস্থাটি বিতর্কিত হয়েছে বারবার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইডিআরএর চেয়ারম্যানরাই ছিলেন এসব বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনসহ এখন পর্যন্ত সংস্থাটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে পূর্ণকালীন দায়িত্ব (ভারপ্রাপ্তদের বাদ দিয়ে) পালন করেছেন তিনজন। আইডিআরএকেন্দ্রিক বিভিন্ন অভিযোগে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনজনই।

আইনবহির্ভূতভাবে শেয়ার ব্যবসা, বেতনের দ্বিগুণ গাড়ি ভাতা নেয়া, প্রতিষ্ঠানের অর্থের যথেচ্ছ অপব্যবহারসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের অভিযোগে বিতর্কিত হয়ে পড়েছিলেন আইডিআরএর প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। তার উত্তরসূরি শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর সময়ও বিতর্কে জড়িয়েছে আইডিআরএ। বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে সরাসরি ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ নিয়ে গতকাল একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছে কোম্পানিটি। কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দায়িত্বরত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওই সংস্থার অধীন কোনো প্রতিষ্ঠানের সরাসরি ঘুষ দাবির অভিযোগ উত্থাপনের নজির এটিই প্রথম।

আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. মোশাররফ হোসেন নিজেও একসময় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেছেন। ১৯৯৮ সালে কোম্পানিটিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি থেকে চাকরি ছাড়ার সময় তিনি ডেল্টা লাইফের যুগ্ম নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কর্মরত ছিলেন।

কোম্পানির সাবেক কর্মকর্তা ও আইডিআরএর বর্তমান চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ডেল্টা লাইফের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানিটির কাছে উেকাচ দাবি করেছেন তিনি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে তিনি কোম্পানির ২০১৯ সালের অ্যাকচুয়্যারিয়াল বেসিস অনুমোদন করেননি। এছাড়া সিইওর নিয়োগ নবায়ন অনুমোদন নামঞ্জুর এবং নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান। এমনকি তিনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদকে বরখাস্ত করে প্রশাসক নিয়োগেরও হুমকি দিয়েছেন।

অন্যদিকে আইডিআরএ সূত্রে জানা গিয়েছে, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের দ্বন্দ্ব শুরু ২০১৯ সালের অক্টোবরে। ওই সময় ডেল্টা লাইফের ২০১৫-২০১৭ পর্যন্ত তিন বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার জন্য হাওলাদার ইউনূস অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকে নিয়োগ দেয়া হয়। পাশাপাশি কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থা তদন্তের জন্য ফেমস অ্যান্ড আর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসকেও নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। দুই নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে ডেল্টা লাইফের ৪৭টি অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। এর মধ্যে গ্রাহকের পলিসির অর্থ পরিশোধ না করা, তহবিলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো, রাজস্ব ফাঁকি, ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে আদায় করা অর্থ কোম্পানির হিসাবে না দেখানো, ব্যাংক হিসাবে বড় ধরনের গরমিল এবং আর্থিক প্রতিবেদন তৈরির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষামান যথাযথভাবে অনুসরণ না করা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে ১০টি বিষয়ে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি সুনির্দিষ্টভাবে আরো ২৫টি অনিয়মও চিহ্নিত করেছেন নিরীক্ষক। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটি গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করছে আইডিআরএ।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১