আর্থিক খাতের অনিয়ম নিয়ে সংসদে এমপিদের প্রশ্ন, অর্থ পাচারকারীরা কারা?

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২১-০১-২৬ ২১:১৭:২৮

image

দেশের আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা ও নানা ধরনের অনিয়ম নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েক জন সংসদ সদস্য। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর গতকাল মঙ্গলবার আলোচনায় অংশ নিয়ে ক্ষুব্ধ এই সদস্যরা জানতে চেয়েছেন-অর্থ পাচারকারী ও এসব লুটেরা কারা? তাদের পরিচয় কী? তারা কি দলে, না সরকারে, নাকি সরকারের আশপাশে? সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা নিরলস পরিশ্রম করলেও আর্থিক খাতকে পিতামাতার অবাধ্য সন্তানের সঙ্গে তুলনা করে তারা বলেছেন, আর্থিক খাতকে কোনোভাবেই সোজা পথে আনা যাচ্ছে না।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, দেশের টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, এই লুটেরা কারা? এরা কী দলে না আশপাশেই? এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাই। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রপ্তানি আয়ের তথ্যে ‘গরমিলের’ অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সরকারের এ দুটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচ বছরে রপ্তানি আয়ের যে গরমিল, তা দিয়ে ছয়টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। ইপিবির হিসাবে গত ৫ বছরে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, রপ্তানি আয় ৮০ বিলিয়ন ডলার। ইপিবির তুলনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ২০ বিলিয়ন ডলার কম। এই হিসাবে পাঁচ বছরে লাপাত্তা হয়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রের এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় আছে? আদৌ আছে কি না, তা জানেন না নীতিনির্ধারকেরা।

ফখরুল ইমাম আরো বলেন, দেশে ধনীদের আয় যেভাবে বাড়ছে, দরিদ্রদের আয় সেভাবে বাড়ছে না। এর ফলে আয়-ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দরিদ্র। প্রায় ২ কোটি অতিদরিদ্র। তিনি বলেন, এখন শোনা যাচ্ছে, বিদ্যুেকন্দ্রে কয়লা ব্যবহার করা হবে না। তাহলে এত দিন এত আন্দোলন চলল কেন? এর অর্থদণ্ড কত? চীনের সঙ্গে ২৭টি সমঝোতা স্মারকে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। বাস্তবে এর সামান্যই এসেছে বাংলাদেশে। কত এসেছে তা জানতে চাই। দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরাট অভিযোগ উঠেছে। বৃহত্ প্রকল্পের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে কি না, জানতে চাই।

জাপার আরেক এমপি পীর ফজলুর রহমান আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। দুর্নীতি হলে সবার আগে রাজনীতিবিদদের কলুষিত করা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশে বেশি টাকা পাচার করছেন। কোন কোন কর্মকর্তা অর্থ পাচার করছেন, এটা দেখা দরকার। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক কাজ করছেন। কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক সেক্টর পিতামাতার বখে যাওয়া সন্তানের মতো। অবাধ্য সন্তানের মতো। সরল পথে আনা যাচ্ছে না। হাইকোর্টও বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঠগবাজ, প্রতারকদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এক মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ এসেছে। পিপলস লিজিং কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তবে পি কে হালদারের বান্ধবীরা সুখে আছেন। পি কে হালদারের অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা তার আশপাশে ছিলেন, তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

আগের দিন সোমবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে সংরক্ষিত আসনে বিএনপি দলীয় সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, লুটের এক ‘টেক্সটবুক এক্সাম্পল’ এখন বাংলাদেশ। লুটের টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে তৈরি হয় বেগমপাড়া কিংবা সেকেন্ড হোম। গত এক যুগে জানা-অজানা লুটের ফল হয়েছে বাংলাদেশে কোটিপতির বাম্পার ফলন। ২০০৯ সালে কোটিপতি ছিলেন ২১ হাজার ৪৯২ জন। ২০২০ সালে সেটি দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৪৮৮ জনে। ব্যাংকের এই হিসাবের বাইরে আছেন আরো বহু কোটিপতি। বিশ্বে ২৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হিসেবে অতিধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ প্রথম আর ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ তৃতীয়, কিন্তু বিশ্বে দরিদ্র মানুষের সংখ্যায় বাংলাদেশ পঞ্চম।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১