ব্যাংকের জনবল নিয়োগে স্বচ্ছতা আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জাল-জালিয়াতি প্রতিরোধে নেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি উদ্যোগ। পুরো প্রক্রিয়াটি কঠোর নজরদারির মধ্যে রাখারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য জনবল নিয়োগসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কমিটি বেশ কিছু সুপারিশ দিয়েছে ঊর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংকগুলোর নতুন লোকবল নিয়োগের প্রক্রিয়াটি বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত কর্মকর্তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলোর নতুন লোকবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আগে প্রায়ই জাল-জালিয়াতির অভিযোগ উঠত। অনেকেই লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেয়েও নিয়োগ পেতেন না। অসাধু উপায়ে মেধাবীদের বাদ দিয়ে কম মেধাবীদের নিয়োগ দেয়া হতো। এসব অভিযোগ ওঠায় ব্যাংকিং খাতে নতুন জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ন্যস্ত করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে সরকারি খাতের ১৪টি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জনবল নিয়োগ দেয়া হয়। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একটি আলাদা উপবিভাগ খোলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে বাইরের কোনো কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা সম্পন্ন করে প্রার্থীদের মেধার মান অনুযায়ী একটি সিরিয়াল করে নেয়। তার ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ভিত্তিতে নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় যথাযথ তদারকি না থাকায় বিভিন্ন সময় নানা অনিয়োগের অভিযোগ দেখা দেয়। ব্যাংকিং খাতে নতুন লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সুপারিশের আলোকে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ সালের ৩০ মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। ঘটনাটি প্রথমে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব অডিটে ধরা পড়ে। পরে তা গভর্নরের নজরে আনা হয়। গভর্নর অধিকতর তদন্তের জন্য একটি কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির তদন্তে জাল-জালিয়াতির সাথে জড়িতদের শনাক্ত করা হয় এবং জড়িতদের শাস্তি দেয়া হয়। ওই সময় তদন্ত কমিটি ব্যাংকিং খাতে নতুন লোকবল নিয়োগে অধিকতর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়। ওই সব সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য এখন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে লিখিত পরীক্ষার খাতায় কোডিং ও ডি কোডিং-সংক্রান্ত কাজ সম্পূর্ণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করা, পরীক্ষা গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান লিখিত পরীক্ষার খাতা সরাসরি ডেপুটি গভর্নরের কাছে প্রেরণের ব্যবস্থা করা, ফলাফল ও উত্তরপত্র জিএম ও নির্বাহী পরিচালকের যৌথ তত্ত্বাবধানে রাখতে হবে। পাশাপাশি কোনো কারণে পরীক্ষার খাতা পুনঃপরীক্ষণের প্রয়োজন হলে ওই সময়ে মানবসম্পদ বিভাগ ছাড়া অন্য বিভাগের একজন উপমহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) নেতৃত্বে মানবসম্পদ বিভাগের ন্যূনতম উপপরিচালক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করে কার্য সম্পাদন করা এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নির্ধারণ করে দেয়া। তা হলে কাজের জবাবদিহিতা থাকবে। একই দায়িত্ব এড়ানোর প্রবণতা কমে যাবে।
কমিটি বলেছে, লিখিত ও মৌলিক পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মোট নম্বরের ভিত্তিতে প্রণীত প্যানেল ও কোটা নির্ধারণের পর নিয়োগের জন্য প্রস্তুত করা চূড়ান্ত প্যানেল বিভাগীয় সেফগার্ড দ্বারা নিরীক্ষা না করে ইন্টারনাল অডিট বিভাগ কর্তৃক অত্যন্ত দ্রুততার সাথে পরীক্ষা করানোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। এ ধরনের প্যানেলে কমপক্ষে ডেপুটি গভর্নর পর্যন্ত স্বাক্ষর করা, একই সাথে মানবসম্পদ বিভাগের রিক্রুটমেন্ট আউটসোর্সিং উইংয়ে তিন বছরের বেশি কোনো কর্মকর্তাকে বহাল না রাখা, সব পর্যায়ে তদারকি জোরদার করার সুাপারিশ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে ব্যাংকিং খাতে নতুন লোকবল নিয়োগে যেকোনো প্রকার বিতর্ক এড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১