পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বিনিয়োগকারী, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নিয়মিতভাবে ১৭ ধরনের তথ্য দিতে হয়। মূল্য সংবেদনশীলসহ সব ধরনের তথ্যের ঘোষণা দিতে ডিজিটাল ব্যবস্থার প্রচলন করছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর ফলে তথ্য প্রকাশে সময় কমবে। একইসঙ্গে ভুল তথ্য প্রকাশের হার কমে আসবে।
ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, পরীক্ষামূলকভাবে ৩০টি কোম্পানি থেকে অনলাইনে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই সব কোম্পানি থেকে একইভাবে অনলাইনে তথ্য নেওয়া শুরু হবে। আইনি জটিলতা না থাকলে ওই তথ্যই হুবহু ডিএসইর ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে। বর্তমানের ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে পাঠানো তথ্য ওয়েবসাইটে আপলোডের সময় ভুল হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে, তা দূর হবে। এছাড়া আরও দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্যভাবে তথ্য প্রকাশ করা যাবে।
ডিএসইর ইনফরমেশন ডিসক্লোজার মডিউল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন পেতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পর্ষদ অনুমোদন করলে আগামী সপ্তাহ থেকে এটি চালু করতে প্রস্তুত স্টক এক্সচেঞ্জ। এ প্রক্রিয়ায় তথ্য গ্রহণে ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনুমোদন দিয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিরুদ্ধে তালিকাভুক্ত কোম্পানির থেকে মূল্য সংবেদনশীল তথ্য পাওয়ার পর তা প্রকাশ না করার বা দেরিতে প্রকাশের অভিযোগ আছে। অনেক বিনিয়োগকারী বিশ্বাস করেন, শেয়ারপ্রতি আয় বা অন্য মূল্য সংবেদনশীল তথ্য এবং শেয়ার ধারণের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ না করে বা বিলম্বিত করে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে সুবিধা দেওয়া হতে পারে। প্রতি বছরই ইপিএস-সংক্রান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রদানে কিছু কোম্পানি ভুল করে। কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জ যখন ওই তথ্য প্রকাশ করার পর কোম্পানি থেকে ভুল সংশোধন করা হয়, তখন অনেকেই স্টক এক্সচেঞ্জকে দায়ী করে থাকেন। ডিজিটাল মডিউলে তথ্য নেওয়ার ফলে এক্ষেত্রে কার ভুল তা ডিজিটাল ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রমাণ করা যাবে এবং দায়ীকে জবাবদিহির আওতায় আনা সহজ হবে।
ডিএসইর প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি সমকালকে বলেন, নতুন ব্যবস্থায় কোম্পানি বা সম্পদ ব্যবস্থাপকের দেওয়া তথ্য প্রকাশে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে। কোম্পানি কখন তথ্য দিল, কখন তা প্রকাশ হলো, তার সবই অনলাইনে থাকবে। এক্ষেত্রে কেউ ব্যত্যয় করলে তাকে জবাবদিহির আওতায় আনা যাবে। তিনি জানান, বিদ্যমান আইনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিকে বার্ষিক, অর্ধবার্ষিক ও প্রান্তিক আর্থিক প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ পর্ষদ সভায় অনুমোদনের আধাঘণ্টার মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জকে সরবরাহ করতে হয়। এর বাইরে যেকোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য, উদ্যোক্তা বা পরিচালকদের শেয়ার কেনাবেচা বা উপহার প্রদান বা হস্তান্তরের ঘোষণা, প্রতি মাসের শেষে শেয়ারহোল্ডারদের ধরন অনুযায়ী শেয়ার ধারণ সম্পর্কিত তথ্যসহ মোট ১৭ ধরনের তথ্য দিতে হয়।
ডিএসইর কর্মকর্তারা জানান, পর্ষদ অনুমোদন করলে প্রথম তিন মাস পরীক্ষামূলকভাবে তথ্য নেওয়া হবে। এ সময়ে অনলাইন মডিউলের বাইরে আগের মতো চিঠি বা ফ্যাক্সের মাধ্যমে তথ্য জানাতে হবে। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে চিঠি আকারে তথ্য প্রদান থেকে কোম্পানিগুলোকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
কর্মকর্তারা জানান, কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো তথ্য মডিউলে আপলোড করার পর ছয়টি পর্যায়ে পরীক্ষা করে ট্রেড প্ল্যাটফর্মে বা ওয়েবসাইটে প্রকাশ হবে। এক্ষেত্রে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কেউ বিলম্ব করলে তার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ব্যবস্থা নিতে পারবে। কারণ, এ মডিউলের কার্যক্রম বিএসইসিও পর্যবেক্ষণ করতে পারবে। সঠিকভাবে তথ্য আপলোডের বিষয়ে ইতোমধ্যে সকল তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানির সংশ্নিষ্ট সাত শতাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১