ভোলার চরফ্যাশনে মধুমতি ব্যাংকের সদ্য বরখাস্তকৃত ম্যানেজার রেজাউল কবির বিরুদ্ধে প্রায় ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। তাকে সহযোগিতা করেছেন ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথ। এ ঘটনায় থানায় মামলা করার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন অভিযুক্ত ম্যানেজার রেজাউল কবির।
টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রোববার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথসহ ৬ জনকে আটক করলেও সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। মামলা প্রক্রিয়াধীন উল্লেখ করে দিনভর কোনো তথ্য না দিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের অপেক্ষায় রাখেন চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মনির হোসেন মিয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সাবেক ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির ও ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথ পরস্পর যোগসাজশে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ১২টি পেঅর্ডারের মাধ্যমে আত্মসাত করেন। তারা নিজেরা অবৈধভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এবং ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতিসাধনের জন্য পরিকল্পিতভাবে এমন কাজ করেন।
১৪ জানুয়ারি ব্যাংকের বর্তমান ম্যানেজার পে-অর্ডার স্টক নিরীক্ষার সময় এ অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়ে। পরদিন ১৫ জানুয়ারি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার ও বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক মো. ইয়াছিন উদ্দিন সোহেল বাদী হয়ে চরফ্যাশন থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এতে সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক রেজাউল কবির ও ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথকে আসামি করা হয়।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৩ জানুয়ারি ২০২১ পেঅর্ডার নং ১৭৭২৫৭ আইবিবিএল লালমোহন শাখায় ৬০ লাখ, আইবিবিএল চরফ্যাশন শাখা পে অর্ডার নং ১৭৭২৫৮ মাধ্যমে ৯০ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৫৯ আইবিবিএল চরফ্যাশন শাখা ৯৫ লাখ, পে অর্ডার নং ১৭৭২৬০ ইসলামি ব্যাংক ৮৫ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬১ আইবিবিএল চরফ্যাশন শাখায় ৯৬ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬২ আইবিবিএল চরফ্যাশন শাখায় ৩৪ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬৩ আইবিবিএল চরফ্যাশন শাখা ৪০ লাখ, পের্ডার নং ১৭৭২৬৪ উত্তরা ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ৪০ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬৫ ন্যাশনাল ব্যাংক চরফ্যাসন শাখা ৯০ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬৬ ন্যাশনাল ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ৮৫ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬৭ ন্যাশনাল ব্যাংক চরফ্যাশন ৯৫ লাখ, পেঅর্ডার নং ১৭৭২৬৮ ন্যাশনাল ব্যাংক চরফ্যাশন শাখা ৮৫ লাখ। বিপুল পরিমাণ টাকার এ পেঅর্ডার একই তারিখে করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি ও সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, ১৫ জানুয়ারি চরফ্যাশন থানা কর্তৃপক্ষ এজাহারটি জিডি করে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে দুদক বরিশাল কার্যালয়ে প্রেরণ করে। যার জিডি নং ৫৫৯। বিষয়টি দুদক তপশিলভুক্ত হওয়ায় মামলা না করে দুদক কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
অপরদিকে, রোববার সন্ধ্যা ৬টায় চরফ্যাশন জেলা পরিষদ মার্কেটের মধুমতি ব্যাংকে আকস্মিক অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় ওই ব্যাংকের ম্যানেজার অপারেশন্স কিশোর কুমার দেবনাথ, অভিযুক্ত রেজাউল কবিরের বড়ভাই হুমায়ুন কবির, আর আত্মীয় রাসেল, মার্শেল, বাবু ও সাইফুল নামে ৬ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সারাদিন তারা থানা হেফাজতে থাকলেও পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য দেয়নি। এসব নাম আটকদের পারিবারিক সূত্রে পাওয়া গেছে।
চরফ্যাশন থানার ওসি মো. মনির হোসেন মিয়া মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে উল্লেখ করে কোনো তথ্য দেননি। আটকদের নাম ঠিকানা দিতেও তিনি রাজী হননি। তিনি থানায় জিডি করার কথা স্বীকার করে সাংবাদিকদের প্রয়োজন হলে দুদক অফিস থেকে জিডির তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত আটকদের আদালতে হাজির করতে দেখা যায়নি।
মধুমতি ব্যাংকের বর্তমান শাখা ব্যবস্থাপক ইয়াছিন উদ্দিন সোহেল জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় তিনি কথা বলতে পারবেন না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলে বিস্তারিত তথ্য দেবেন। এছাড়া ব্যাংকে হিসাব নিকাশের বিষয়ে অডিট চলছে বলেও জানান তিনি।
ভোলার পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, শুক্রবার মধুমতি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে ফোন করে তার ব্যাংক থেকে ৯ কোটি টাকা শাখা ব্যবস্থাপকের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ দেন। পরে চরফ্যাশন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অভিযোগটি দুদকে প্রেরণ করা হয়।
এ অবস্থায় রোববার ব্যাংকের একটি অডিট টিম চরফ্যাশন গেলে রেজাউলের আত্মীয় স্বজনরা অডিট টিমকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এমন খবর পেয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে উপযুক্ত অভিযোগ দেয় নি। টাকা আত্মসাতের সহযোগী হিসেবে বলা হয়েছে। অভিযোগটি জিডি করে আদালাতে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রঃ সময় নিউজ
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১