কোভিড-১৯ মহামারি সত্ত্বেও আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য একটি উচ্চাভিলাষী জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছে সরকার। এই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ফলে আগামী অর্থবছরের মূল জিডিপি বা মোট দেশজ উৎপাদনের আকার গিয়ে দাঁড়াচ্ছে ৩৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। চলতি ২০২০-২১ সালের জিডিপির এই আকার রয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা ছিল ৮ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু অর্থবছরে অর্ধেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর এখন মনে হচ্ছে, কোভিডের কারণে এই জিডিপি অর্জন করা সম্ভব হবে না। ফলে প্রবৃদ্ধি প্রায় ১ শতাংশ কমিয়ে তা ৭ দশমিক ৪ শতাংশের ঘরে নিয়ে আসা হয়েছে। তার পরও মোটা দাগে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা আদৌ সম্ভব হবে কি না! অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত যে হিসাব তাতে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরে মূল বাজেটের প্রাথমিক আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৯৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এটি নতুন অর্থবছরের প্রাক্কলিত নতুন জিডিপির ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ।
বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১০ দশমিক ৮ শতাংশ।
তবে রাজস্ব আদায়ের যে প্রাক্কলন করা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কারণ কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে তা এখন পর্যন্ত বলা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী বছরের পুরোটা সময় এ পরিস্থিতি থাকলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ধারে কাছে যাওয়া সম্ভব হবে না। কারণ হিসেবে তারা অতীতের দুই অর্থবছরে পরিসংখ্যানে তুলে ধরেছেন। বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিতে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে প্রণীত অর্থ বিভাগের প্রতিবেদন মতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন রাজস্ব আদায়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল তিন লাখ ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রকৃত আদায় হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। এটি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। মোট রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআরের আওতাধীন প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ২৫ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।
এ দিকে অর্থ বিভাগের গত নভেম্বরের এক প্রতিবেদনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা এবং প্রবৃদ্ধির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনবিআরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত জুলাই-নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ১২ হাজার ৯৫৯ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মোট আদায় হয়েছে ৮৭ হাজার ৯২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে ঘাটতির পরিমাণ ২২ দশমিক ৯০ শতাংশ। তবে ঘাটতি হলেও গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রাজস্ব প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ছিল ৮৪ হাজার ৪০৪ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এ দিকে জানা গেছে, নতুন বাজেটে সার্বিক ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই লাখ ৯ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এটি প্রাক্কলিত নতুন জিডিপির ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। সার্বিক ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ৪২ হাজার ১১১ কোটি টাকা (প্রাক্কলিত নতুন জিডিপির ৪ শতাংশ) অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং অবশিষ্ট ৬৭ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা (প্রাক্কলিত নতুন জিডিপির ১ দশমিক ৯ শতাংশ) বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান থেকে পূরণ করা হবে।
নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির গড় হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ এবং সরকারি-বেসরকারি মোট বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে প্রস্তাবিত নতুন জিডিপির ৭ দশমিক ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে প্রস্তাবিত নতুন জিডিপির ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। টাকার অঙ্কে এর পরিমাণ হচ্ছে যথাক্রমে দুই লাখ ৬৬ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা এবং আট লাখ ৭০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে আগামী নতুন বাজেটের আকার, মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও বাজেট ঘাটতির খুব বেশি হেরফের হচ্ছে না। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার হচ্ছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে আগামী বাজেটের আকার বাড়ছে মাত্র ২৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। শতকরা হিসাবে বাজেটের আকার বাড়ছে প্রায় ৪ দশমিক ৪৬ শতাংশ। অন্যান্যের মধ্যে চলতি অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ১৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আগামী নতুন বাজেটে এ খাতে মোট আয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে মাত্র এক হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা দশমিক ৪৪ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে গত অর্থবছর ও চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের গতিধারা পর্যালোচনায় এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১