একই স্থানে শাখা খোলাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত শীর্ষ দুই বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী ও অগ্রণী। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সোনালী ব্যাংককে একটি নতুন শাখা খোলার জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় আর্থিক বাণিজ্য কেন্দ্রিক দ্বন্দ্বের। অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় তা বাতিল করার আবেদন জানিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছেন অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এই অনুমোদন দেওয়া নিয়ে এখন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে লেখা চিঠিতে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেছেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অর্ধ কিলোমিটারের মধ্যে কাজলা গেট এলাকায় মতিহার শাখা নামে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের একটি শাখা রয়েছে। এরপরও তাদের আবেদনে সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সোনালী ব্যাংকের আরও একটি শাখা খোলার অনুমোদন দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এতে সরকারি মালিকানাধীন দুটি ব্যাংকের মধ্যে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ও অশুভ’ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্যই সেখানে সোনালী ব্যাংকের নতুন শাখা খোলার সিদ্ধান্ত বাতিলের সুপারিশ করেন তিনি। প্রায় ৫৫ বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস শাখার মাধ্যমে সেখানে সার্বিক ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালিতে তাদের নিজস্ব শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে নীতিগত অনুমোদনের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আবেদন করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আবেদন মঞ্জুর করে গত ২০ ডিসেম্বর দুটি শাখা খোলার নীতিগত অনুমোদন দেয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও অর্থমন্ত্রীকে। ওই চিঠিতে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক প্রস্তাবিত দুটি নতুন শাখা খোলার বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দেওয়া হলো।
এদিকে এ সিদ্ধান্তের তিন দিনের মাথায় ২২ ডিসেম্বর তা বাতিলের আবেদন করে চিঠি দেয় অগ্রণী ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সেখানকার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দেওয়াসহ সার্বিক ব্যাংকিং কার্যক্রম সন্তুষ্টির মাধ্যমে প্রদান করছে একমাত্র ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংক। এছাড়া ১৯৮৪ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতি বিভাগের প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রণী ব্যাংক স্বর্ণপদক দিয়ে আসছে। যা মুজিববর্ষ উপলক্ষে বর্তমান ‘অগ্রণী ব্যাংক বঙ্গবন্ধু স্বর্ণ পদক’ নামে নামকরণ করেছে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাসিক বেতন-ভাতার বিপরীতে ‘হোলসেল ঋণ’ সুবিধা চালু করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত ৩৫২ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছে এবং বিতরণ কার্যক্রম চলমান আছে। পাশাপাশি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতনের বিপরীতে ব্যক্তিগত ঋণ দেওয়া হয়েছে এ পর্যন্ত ৫০০ জনকে। আর শাখা ও জুবেরী ভবনের পাশে দুটি এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে দুই হাজার এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন সুবিধা চালু আছে।
অগ্রণী ব্যাংকের চিঠিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকের নিজস্ব কর্মচারীদের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহ নির্মাণ ঋণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। এছাড়া এই ব্যাংকে রিয়েল টাইম ব্যাংকিং সেবা দেওয়ার পাশাপাশি ইএফটি এবং আরটিজিএস সুবিধা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে অর্থ স্থানান্তর সুবিধা চালু করা হয়েছে। এ অবস্থায় সোনালী ব্যাংককে এখানে নতুন শাখা খোলার নীতিগত সিদ্ধান্ত বাতিল বা নাকচ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেলো।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সোনালী ব্যাংকের নতুন খোলা বা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেবেন সিনিয়র সচিব। তিনি বর্তমান ব্যক্তিগত সফরে দেশের বাইরে আছেন। দেশে ফিরে দুই ব্যাংকের এই জটিলতার বিষয়টি সমাধান করবেন।
জানা গেছে, এ বছর সোনালী ব্যাংকের নিট মুনাফার লক্ষ্য হচ্ছে ১৮০ কোটি টাকা। আর ৬১ থেকে লোকসানি শাখা ৪৩-এ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অগ্রণী ব্যাংকের এ বছর নিট মুনাফা ১০০ কোটি টাকা। লোকসানি শাখা ১৪টি থেকে ১২টিতে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আতাউর রহমান প্রধান জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের ব্যাংকের কার্যক্রম সম্প্রসারণে নতুন শাখা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ শাখা খোলার জন্য অনুমতিও দিয়েছে। এখন আমরা আমাদের পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করবো।’
অপরদিকে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে আমার কোনও বক্তব্য নাই। তবে একই ক্যাম্পাসে দুটি ব্যাংকের দুটি শাখা কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা কতটুকু কস্ট ইফেক্টিভ (লাভজনক) হবে, তা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।
ব্যাংক, বীমা, অর্থনীতির আপডেটেড সংবাদ পেতে নিয়িমিত ভিজিট করুন: www.bankbimabd.com
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১