এই লেখার প্রতিটি শব্দ লিখছি যখন, ক্রমাগত বদল ঘটে চলেছে সংখ্যার। সে সংখ্যা পৃথিবী জুড়ে আক্রান্ত এবং মৃতের। করোনাভাইরাসের করাল গ্রাসে তোলপাড় গোটা দুনিয়া। একটা সময় পর্যন্ত ভারত কিছুটা নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও, এখন এখানে আক্রান্ত আর মৃতের সংখ্যা প্রতি দিন বেড়ে চলেছে। টিভির পর্দায় তাকালেই অনেকটা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের সময় ভেবে ভুল হয়। রাজ্যের নাম এবং তার পাশে সংখ্যা বসানো! যেমনটা আমরা লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল সম্প্রচারের সময়ে দেখতে অভ্যস্ত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সংখ্যাটা আসনের নয়, বরং আক্রান্ত এবং মৃত মানুষের।
আমার তো বটেই এবং তার পরবর্তী প্রজন্মের মানুষও তাঁদের জীবদ্দশায় এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হননি কখনও। আমরা মন্বন্তর দেখিনি কিংবা প্রত্যক্ষ করিনি স্বাধীনতা যুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, দেশভাগ এবং উদ্বাস্তু মানুষদের হাহাকার। তুলনামূলক ভাবে আমরা একটি স্থিতিশীল সময়ের সন্তান হিসাবে কাটিয়েছি, অন্তত আমাদের এখনও পর্যন্ত জীবন।
এই করোনাভাইরাস ঘিরে যে বাস্তবতার সম্মুখীন আজ আমরা, তা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের কাছে এক ভয়ানক অদ্ভুত সময়। যে আমরা চিরকাল শিখে এসেছি, প্রকৃত মানুষ হতে হলে অন্য মানুষের কাছে যেতে হয়, তাঁর পাশে দাঁড়াতে হয়, আজ সেই ধারণাটাই আমূল বদলে গিয়েছে। মানুষের থেকে দূরে থাকাই আজ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শ্রেষ্ঠ উপায়। এত দিন মুখের উপরে মুখোশকে আমরা জেনে এসেছি নেতিবাচক অর্থে, আর আজ সেই মুখোশই সব থেকে ইতিবাচক দিক আমাদের জীবনে। বিদেশফেরত মানুষেরা এত দিন যে অতিরিক্ত সম্ভ্রম আদায় করে এসেছিলেন আমাদের কাছে, আজ সেই বিদেশফেরতরাই আমাদের ভ্রূকুটির মুখোমুখি বেশি করে।
‘লকডাউন’, ‘সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং’ ইত্যাদি আপাত অচেনা শব্দবন্ধগুলোই এখন সব থেকে চর্চিত আমাদের আজকের রোজকার অভিধানে। সত্যিকার অর্থেই আমাদের চেনা পৃথিবী আজ বদলে গিয়েছে পুরোপুরি। যা দেখি সব নতুন লাগে।
লেখক : একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্ণধার, কোলকাতা
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১