বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা কান্তা বিশ্বাস এর ডেঙ্গুতে মৃত্যু

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২৩-০৭-২৫ ২১:২০:৫৪

image

বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক কান্তা বিশ্বাস আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত রোববার রাতে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তাঁর তিন বছর বয়সী মেয়ে এখন শুধুই মাকে দেখতে চায়।  

স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছোট্ট মেয়েকে আগলে রেখেছেন রমনী কান্ত দাস। স্ত্রীকে হারিয়ে যেন কষ্টের অথই সাগরে পড়েছেন তিনি। স্ত্রীকে নিয়ে বলতে গিয়ে ডুকরে কেঁদে ওঠেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রমনী কান্ত দাস বলেন, ১৮ জুলাই তাঁর স্ত্রীর জ্বর আসে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন চিকিৎসক এবং পরিচিত আরেকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেন। জ্বর আসার ২৪ ঘণ্টা পর পরীক্ষা করালে ডেঙ্গু হয়েছে কি না, জানা যাবে জানিয়ে ওষুধ দেন চিকিৎসক। ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু পজিটিভ আসে।

পরে ২০ জুলাই স্ত্রীকে মতিঝিলের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করান। কিন্তু সেখানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) না থাকায় আইসিইউ আছে, এমন হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। পরদিন শুক্রবার (২১ জুলাই) ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয় কান্তা বিশ্বাসকে।

তখন ধানমন্ডির ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, রোগীর পেছনে অনেক খরচ হবে। রমনী কান্ত বলেন, ‘বলেছিলাম, খরচ হোক সমস্যা নেই। ভালো চিকিৎসাটাই চাই। সেখানে অক্সিজেন ও বিভিন্ন নল লাগিয়ে চিকিৎসা চলেছে। চিকিৎসায় কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা তো বলতে পারব না। হাসপাতালে নেওয়ার সময়ও স্ত্রী কথা বলেছে। জানিয়েছিল, তার প্রচণ্ড পেটব্যথা হচ্ছে। অস্থির হয়ে পড়েছিল। বারবার জানতে চাইছিল, সে বাঁচবে কি না। বলেছিলাম, ভয়ের কিছু নেই। কিন্তু স্ত্রীকে গোপীবাগের বাসায় ফিরিয়ে নিতে পারলাম না।’

করোনার আগে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন রমনী কান্ত দাস। করোনায় প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে গেলে বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এর পর থেকে সুবিধামতো তেমন কিছু করতে পারেননি। কান্তা বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন ২০১৯ সালে। স্বামী চাকরি হারানোর পর থেকে কান্তার একার রোজগারেই সংসার চলছিল।

এখন একদিকে তিন বছর বয়সী মেয়েকে সামলানো, অন্যদিকে সংসার কীভাবে চলবে, এসব ভেবে রমনী কান্ত দাস নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ধানমন্ডির হাসপাতালে স্ত্রীর চিকিৎসায় তিন দিনে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

রমনী কান্ত দাস আক্ষেপ করে বলেন, ‘টাকা গেছে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। স্ত্রীকে বলেছিলাম, তার চিকিৎসায় যদি জমি বিক্রি করতে হয়, তা-ও করব। তবু কিছু করতে পারলাম না। চিকিৎসককে বলেছিলাম, বাচ্চা বাঁচে তো ভালো, যে করেই হোক বাচ্চার মাকে বাঁচান।’

কান্তা বিশ্বাস বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল শোক জানিয়েছে। এ ছাড়া তাঁর জন্ম ও মৃত্যুসাল লিখে সাদা–কালো একটি ছবির নিচে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মীদের পক্ষ থেকে লেখা হয়েছে, ‘এভাবেও চলে যাওয়া যায়...আমরা শোকাহত।’

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১