১) অগ্রীম পরিশোধ : এ পদ্ধতিতে ক্রেতা পণ্য মূল্য বিক্রেতাকে অগ্রীম পরিশোধ করে।সাধারণত আন্তর্জাতিক লেনদেনে অগ্রীম পরিশোধর ব্যবহার কম পরিলক্ষিত হয়া। কিন্তু ক্রেতা অপরিচিত বা মুদ্রা সংটাপন্ন দেশের হলে রপ্তানিকারকরা এ পদ্ধতিতে পন্য রপ্তানি করে থাকে। সেক্ষেত্রে আমদানিকারক পণ্য জাহাজীকরণের পূর্বেই মূল্য পরিশোধ করেন। ফলে বিক্রেতা ক্রেতার চাহিদামত পণ্য প্রস্তুত করার সুবিধা লাভ করে।
২) ওপেন এ্যাকাউন্ট : আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অঙ্গনে ওপেন একাউন্ট নতুন ধারণা নয়। ওপেন একাউন্ট পদ্ধতিতে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে সম্পাদিত ক্রয় বিক্রয় চুক্তি মোতাবেক বিক্রেতা কর্তৃক মালামাল প্রস্তুত, জাহজীকরণ ও রপ্তানি ডকুমেন্ট ক্রেতার নিকট পাঠানোর পর উক্ত ডকুমেন্ট বা পণ্য প্রাপ্তির পর ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করেন। ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে দীর্ঘকাল যাবৎ/সুসম্পর্ক বিদ্যমান থাকলে অথবা ক্রেতা অত্যন্ত বিশ^স্ত ও নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত হলে এ ধরনের মূল্য পরিশোধ পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। এ পদ্ধতি রপ্তানিকারক পণ্য রপ্তানি করার পর এতদসংক্রান্ত জাহাজী দলিলাদী আমদানিকারকের নিকট পাঠিয়ে দেয়। আমদানিকারক জাহাজী দলিলাদী অথবা পণ্য প্রাপ্তির পর মূল্য পরিশোধ করেন। এ পদ্ধতিতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের সম্পৃক্ত থাকেনা। শুধুমাত্র আমদানিকারক কর্তৃক পণ্যমূল্য ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানিকারকের নিকট পাঠানো হয়।
৩। ডকুমেন্টারি কালেকশন : ডকুমেন্টারি কালেকশন পদ্ধতিতে বিক্রেতা মালামাল ক্রেতার নিকট প্রেরণ করে। একই সাথে বিক্রেতা পণ্য প্রেরণ বা জাহাজীকরণ সংক্রান্ত দলিলাদি যেমন কমার্সিয়াল ইনভয়েস, বিল অব লেডিং, ইন্স্যুরেন্স দলিলাদি,সার্টিফিকেট অব অরিজিন, বিনিময় বিল ইত্যাদি অনুমোদিত ডিলার ব্যাংকর মাধ্যমে ক্রেতার নিকট প্রেরণ করে। এ পদ্ধতি Cash against Documents-CAD নামে অভিহিত। অনুমোদিত ডিলার কালেকশন ভিত্তিতে মূল্য আদায়ের জন্য ক্রেতার দেশের কোন ব্যাংকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। ক্রেতা দেশের ব্যাংক রপ্তানিকারকের নির্দেশ অনুযায়ী মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে জাহাজকিরণ দলিলাদি ক্রেতার নিকট হস্তান্তর করে। অন্য একটি পদ্ধতি (Documents against Acceptance-D/A)। এ পদ্ধতিতে বিল মেয়াদান্তে মূল্য প্রদান করার জন্য ক্রেতা বিল অব এক্সচেঞ্জ অথবা প্রমিসরি নোটে স্বাক্ষর দিয়ে নিদ্দিষ্ট তারিখে বিল পরিশোধের অঙ্গিকার করে।
এ পদ্ধতিতে ডকুমেন্টস ব্যাংকিং চ্যানেলে আসলেও ব্যাংক অর্থ পরিশোধের কোন অঙ্গিকার করেনা। এটি অর্থ পরিশোধের ক্ষেত্রে ডকুমেন্টারি ক্রেডিটের চেয়ে কম নিরাপদ তবে অপেক্ষাকৃত কম খরচ হয়। এ পদ্ধতিতে রপ্তানির ক্ষেত্রে ক্রেতার ব্যাবসায়িক সুনাম এবং মূল্য পরিশোধের আন্তরিকতার ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হয়।
৪) লেটার অব ক্রেডিট : আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ও ব্যবহুত মূল্য পরিশোধ পদ্ধতির মধ্যে লেটার অব ক্রেডিট সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বের ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে পণ্য বিনিময় ক্ষেত্রে লেটার অব ক্রেডিট সেতু বন্ধন হিসাবে কাজ করে। লেটার অব ক্রেডিটে ইস্যুইং ব্যাংকরপ্তানিকারককে মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে। এ পদ্ধতিতে ক্রেতা এলসিতে বর্ণিত জাহাজীকরণের সময়ে মধ্যে পণ্য রপ্তানি করে এবং প্রয়োজনীয় দলিলাদী নমিনেটেড/নেগোশিয়েটিং ব্যাংকে উপস্থাপন করে। উক্ত দলিলাদী এলসির শর্তাবলী পরিপালন করলে নমিনেটেড/নেগোশিয়েটিং মূল্য পরিশোধ করে এবং তা ইস্যুইং ব্যাংকের নিকট প্রেরণ করে। নমিনেটেড/ নেগোশিয়েটিং মূল্য পরিশোধ না করলে ইস্যুইং ব্যাংক পরিশোধ করে। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯০ শতাংশ এলসির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এক দেশ থেকে আরেক দেশে পণ্য ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যে একটা ঝুঁকি থাকে। রপ্তানিকারকের ভয় থাকে যদি ক্রেতা পণ্যের মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হয়। আবার আমদানিকারকের ভয় থাকে অর্থ পেয়ে যদি বিক্রেতা মালামাল না পাঠায়। এক দেশ থেকে আরেক দেশে দূরত্বের কারণে বিরোধ নিষ্পত্তি করা সহজ হয়না। এসব ঝুঁকি এড়াতে পণ্যের ক্রয় বিক্রয়ে লেটার অব ক্রেডিট বা ডকুমেন্টরি ক্রেডিটের ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
লেখাটি ”বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্য ও অর্থায়ন” বই হতে আংশিক সংগৃহীত। বইটি পেতে নিচে ক্লিক করুণ
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১