বৈদেশিক মুদ্রার সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩ পদক্ষেপ

ব্যাংকবীমাবিডি || ২০২২-০৭-১৬ ১১:৫২:৪১

image

ডলার সংকটের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে নতুন তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার ডলারের চাহিদা কমিয়ে আনতে পণ্য আমদানি তদারকি, অব্যবহৃত ডলার নগদায়ন এবং ব্যাংকের অফশোর ইউনিট থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য অর্থ ধার নেয়ার সুযোগ তৈরি করতে আলাদাভাবে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয়   ব্যাংকের নীতি নির্ধারণী এই তিন সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। নির্দেশনা অনুযায়ী রপ্তানি আয় হিসেবে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রার ইআরকিউ (রপ্তানিকারকের রিটেনশন কোটা) হিসাবে রাখা অর্থের ৫০ শতাংশ নগদায়ন করতে হবে এবং এর সীমা কমানো হয়েছে।

অপরদিকে ব্যাংকের বিদেশে পরিচালিত অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং কার্যক্রমের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারি পর্যায়ে আমদানির জন্য ব্যাংকের রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ অর্থ জোগান দেয়া যাবে। এ ছাড়া ৫০ লাখ ডলারের বেশি পণ্য আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ২৪ ঘণ্টা আগেই ব্যাংকগুলোকে পণ্যের বিবরণ, পণ্যের দাম ও পরিমাণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকের অনলাইন ওয়েবপোর্টাল ’অনলাইন ইমপোর্ট মনিটরিং সিস্টেম’ এ রিপোর্ট করতে হবে। ফলে দেশে কি পরিমাণ পণ্য আমদানি হতে যাচ্ছে, কারা করছে, সেই পণ্যর দাম কেমন হতে পারে সে বিষয়ে এলসি খোলার আগেই ধারণা পাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে এর আগে গত এপ্রিলে বিলাসী পণ্য আমদানিতে লাগাম টেনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিলাসী পণ্যর তালিকা দিয়ে তার বিপরীতে আমদানিতে শতভাগ এবং জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, শিশু খাদ্য ও নিত্য পণ্য ব্যতীত অন্যান্য পণ্য আমদানিতে পঁচাত্তুর শতাংশ নগদ মার্জিন রাখা এবং ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এবার আমদানি পণ্য তদারকি শুরু করলো বাংলাদেশ ব্যাংক।

ব্যাংকগুলোর অফশোর ব্যাংকিং নীতিমালা অনুযায়ী, অফশোর ব্যাংকিং থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং কার্যক্রমে মূলধন প্লেসমেন্ট করা যায় না। নতুন নির্দেশনায় নীতিমালায় থাকা ৭.৩ অনুচ্ছেদ ৬ মাসের জন্য শিথিল করে ফান্ড প্লেসমেন্ট করার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সার্কুলারে উল্লেখ করা হয়, অফশোর ব্যাংকিং থেকে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিংয়ে ব্যাংকের রেগুলেটরি মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ফান্ড প্লেসমেন্ট করা যাবে। এর মেয়াদ ছয় মাসের বেশি হবে না। এ অর্থ শুধু মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারি পর্যায়ে আমদানির বেলায় প্রযোজ্য হবে। সাময়িক এ সুবিধার মেয়াদ আগামী ডিসেম্বরেই শেষ হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এতে করে অফশোর ব্যাংকিংয়ে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করে ব্যাংকের সব ধরনের শাখাগুলো পণ্য আমদানিতে উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিতে পারবে। ইআরকিউ’র ডলার নগদায়ন: ইআরকিউ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এতে বলা হয়, ইআরকিউ হিসাবে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকা বৈদেশিক মুদ্রা জমা থাকায় তা থেকে রপ্তানিকারকরা সেভাবে উপকার পাচ্ছেন না। এর বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রায় তা জমা রাখলে এর চেয়ে বেশি মুনাফা পাবেন।

এজন্য এ সার্কুলারে ইআরকিউ হিসাবে থাকা সকল বৈদেশিক মুদ্রার ৫০ শতাংশ অনতিবিলম্বে নগদায়ন করে টাকায় স্থানান্তর করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে।

রপ্তানি আয়ের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ইআরকিউ হিসাবে জমা রাখতে পারেন উদ্যোক্তারা। এই অর্থ রপ্তানি সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করতে বিদেশে নিতে পারেন তারা।

নিয়ম অনুযায়ী, রপ্তানি পণ্যে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের মাত্রা অনুযায়ী রিটেনশন কোটার হার ১৫, ৬০ ও ৭০ শতাংশ হতে পারে। শুধু তথ্যপ্রযুক্তি খাতে এই হার ৭০ শতাংশ।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই সীমা কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। সার্কুলারে বলা হয়, রিটেনশন কোটা হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রা জমার মাত্রা ৫০ শতাংশ কমিয়ে যথাক্রমে ৭.৫, ৩০ ও ৩৫ শতাংশ করা হলো, যা চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। এমন নির্দেশনার ফলে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার সরবরাহ আরও বেড়ে যাবে।

বাড়তি আমদানি দায় মেটাতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এজন্য রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বাড়াতে হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার চাপ সামলাতে নিয়মিত টাকার অবমূল্যায়নও করছে। আমদানি ব্যয় পরিশোধে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে সম্প্রতি।

অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com

ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১