লোডিং ট্রে তে ইচ্ছেকৃত জ্যাম তৈরি করে ২৩১টি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাৎ করার ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। আজ রোববার কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেফতার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা লোডিং ও মনিটরিং কাজে নিযুক্ত ছিলেন। এই বুথগুলোর মেশিনে টাকা স্থাপনের জন্য ১৯ জন লোডার নিযুক্ত রয়েছেন যারা প্রয়োজনে বিভিন্ন স্থানে অর্থ পৌঁছে দিয়ে থাকেন। এছাড়া কারিগরি সংক্রান্ত বিষয়ে বিশেষজ্ঞসহ বেশ কয়েকজন নিয়োজিত আছেন।
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা লোডিং ট্রে-তে টাকা স্থাপনের সময় বিশেষ পদ্ধতি অবলম্বন করতেন। যার ফলে লোডিং ট্রে-তে জ্যাম সৃষ্টি হতো। কোনো গ্রাহক বুথ থেকে টাকা উত্তোলনের জন্য কমান্ড দিলে ঐ পরিমাণ টাকা ডেলিভারি না হয়ে তা পাশের বিনে জমা হত। পরবর্তীতে সেই টাকা অভিযুক্তরা সরিয়ে নিতেন। এজন্য মেশিনের একটি কৌশল অবলম্বন করে টাকাগুলো আত্মসাৎ করতেন তারা।
অভিযোগ পেয়ে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে র্যাব দেখতে পায় যে, থার্ড পার্টি পরিবর্তিত হলেও টাকা লোডার ও অন্যান্য কারিগরি দলের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে র্যাব নিজেদের তদন্ত অব্যাহত রাখে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শনিবার রাতে র্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর মিরপুর, হাজারীবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- আব্দুর রহমান বিশ্বাস, মো. তারেক আজিজ, তাহমিদ উদ্দিন পাঠান ওরফে সোহান, মো. রবিউল হাসান, হাবিবুর রহমান ওরফে ইলিয়াস, মো. কামরুল হাসান, মো. সুজন মিয়া ও মো. আব্দুল কাদের। অভিযানে দুইটি চেকবই, একটি এটিএম কার্ড, চারটি পরিচয় পত্র, একটি স্বর্ণের নেকলেস, এক জোড়া বালা, এক জোড়া কানের দুল, একটি আংটি এবং নগদ নয় লক্ষ ৪১ হাজার ৫৫৫ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা পরস্পর যোগসাজশে বেশ কয়েকটি এটিএম বুথ থেকে টাকা আত্মসাৎের সাথে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, তারা একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বিগত দুই-তিন বছর এক সঙ্গে চাকরি করার সুবাদে তাদের পারস্পরিক পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। এক পর্যায়ে তারা সমমনাদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেন। গ্রেফতার আব্দুর রহমান ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতা। তিনি তার এক পূর্ববর্তী সহকর্মীর কাছ থেকে বিষয়টি রপ্ত করেন। গ্রেফতার অন্যান্যরা তাদের সহযোগী যারা কন্ট্রোল রুম, লোডিং, কলিং এবং মেনটেইনেন্সের দায়িত্ব পালন করতেন।
আব্দুর রহমানের কাছ থেকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তিনি তিন-চার বছর আগে একটি সিকিউরিটিজ কোম্পানিতে চাকরি নেন। তিনি মিরপুর, কালশী, বেনারশি, সেনপাড়া, ইব্রাহিমপুর ও কচুক্ষেত এলাকায় দায়িত্ব পালন করতেন। প্রতিদিন বিভিন্ন এটিএম বুথে কৃত্রিম জ্যাম সৃষ্টির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, গ্রেফতার আব্দুর রহমান, সোহাগ পাঠান, হাবিব ও কামরুল এটিএম বুথে লোডিং, কলিং ও মেনটেইনেন্সের কাজ করতেন। গ্রেফতার কাদের, সুজন, রবিউল ও তারেক আজিজ শুধু লোডিং এর কাজ করতেন।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১