অন্য অনেক খাতের মতো করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে দেশের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের ওপরও। বিশেষ করে ২০২০ সালে সরকারি বিধিনিষেধের সময়ে কয়েক মাস ব্যাংকিং কার্যক্রম ভালোভাবে চালাতে পারেননি তাঁরা। গ্রাহক কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন প্রায় সবাই। গত বছরের মাঝামাঝি থেকে করোনার প্রভাব কমে এলে ক্ষতি পুষিয়ে আবারও ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেন এজেন্টরা। তবে এখনো অনেকেই করোনার সেই ক্ষতি পোষাতে পারেননি।
আর্থিক লেনদেন সহজ করে প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকিং সেবায় আনতে ২০১৪ সাল থেকে দেশে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা। এ সেবার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫-১৬ ভিত্তিবছরে জিডিপি গণনায় নতুন খাত হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিংকে অন্তর্ভুক্ত করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ২৯টি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু আছে। এসব ব্যাংকের অধীনে সারা দেশে ১৮ হাজারের বেশি কেন্দ্রে মোট ১৩ হাজার ৪৭০ জন এজেন্ট এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে ১ হাজার ৮৮৪ জন এবং উপশহর ও গ্রামীণ এলাকায় ১১ হাজার ৫৮৬ জন এজেন্ট কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বেশ কয়েকজন এজেন্টের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধের কারণে সবাই কম-বেশি গ্রাহক হারিয়েছেন। একই সঙ্গে কমে গিয়েছিল মোট আমানতও। তবে গত বছরের আগস্টে বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর আবার পুরোদমে ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেন এজেন্টরা। ক্ষতি পুষিয়ে মুনাফারও দেখা পেয়েছেন কেউ কেউ।
২০১৯ সালের মার্চে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত হন মিরপুরের রূপনগরের বাসিন্দা মো. কবির হাসান। নতুন এ ব্যবসা শুরুর এক বছর যেতে না যেতেই আসে করোনার ধাক্কা। ২০২০ সালে প্রথম দফায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে তিন-চার মাস কোনো ব্যবসা করতে পারেননি তিনি। দোকান ভাড়া ও নিয়মিত বেতন দিতে না পারায় বাধ্য হয়ে সে সময় দোকানের চার কর্মচারীর দুজনকে বাদ দেন। টিকে থাকতে ঋণগ্রস্ত হন। এরপর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও গ্রাহক ও লেনদেন বাড়াতে উদ্যোগী হন তিনি। ঘাড়ের ওপরে থাকা সাড়ে চার লাখ টাকার ঋণের বোঝা এখনো কাটাতে না পারলেও মুনাফায় ফেরা নিয়ে আশাবাদী কবির হাসান। তিনি বলেন, করোনার সময়ে অধিকাংশ গ্রাহকই তাঁদের আমানত ভেঙে টাকা তুলে নিয়েছেন। তাই এখনো এ ব্যবসায় মুনাফায় ফিরতে পারেননি। তবে গত তিন-চার মাসে অল্প অল্প করে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন।
আশার কথা জানালেও নতুন করে করোনার সংক্রমণ নিয়ে চিন্তায় আছেন কবির হাসান। তিনি বলেন, ‘অবস্থার পরিবর্তন হলে ভালো। ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারব। আর যদি করোনার কারণে অবস্থা আবারও খারাপ হয়, তাহলে ব্যবসা বন্ধ করে গ্রামের বাড়ি চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’
নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার খড়িবাড়ি বাজারের সিটি ব্যাংকের এজেন্ট আবুল হাসনাত জানান, করোনার আগে তাঁর কাছে গ্রাহকদের প্রায় ১৮ লাখ টাকা আমানত ছিল। তা কমে এখন দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ টাকায়। আবুল হাসনাত বলেন, এমনিতে এই এলাকায় এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। তার ওপর করোনা বিধিনিষেধের সময় পুরোনো গ্রাহকদের অনেকে তাঁদের জমানো টাকা উঠিয়ে নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি একটি বেসরকারি কলেজে চাকরি করেন হাসনাত। ওটা তাঁর আয়ের প্রধান উৎস ছিল তখন।
আবুল হাসনাত আরও বলেন, করোনায় আর্থিক সংকট নিয়ে মানুষের শঙ্কা কেটে গেছে। তাই আবার লেনদেন ধীরে ধীরে বাড়ছে। যদিও এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে যায়নি।
বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সিফাত হায়দার ২০১৮ সাল থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করছেন। করোনার আগে সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকার ওপরে মুনাফা থাকত তাঁর। বিধিনিষেধের সময় মাসিক মুনাফার পরিমাণ নেমে গিয়েছিল ২০ হাজারের ঘরে। এখন আবার তা বেড়ে ২৫ হাজারের ওপরে গেছে। অন্য এজেন্টদের মতো অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আশাবাদী সিফাতও।
করোনার কারণে আর্থিক ক্ষতির কথা জানান পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জের ব্র্যাক ব্যাংকের এজেন্ট হামিদুর রহমান, রংপুরের রানী পুকুরের ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট রবিন চন্দ্র বর্মণ, কুমিল্লার মুরাদনগরের ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের এজেন্ট রুমান হোসেন। তবে তাঁদের সবার মুখেই ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় শোনা গেছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ক্ষতি কাটিয়ে আবার নিয়মিত মুনাফার ধারায় ফেরার ব্যাপারে আশার কথা জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের পানপাড়া বাজার এলাকার ব্যাংক এশিয়ার এজেন্ট মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে লেনদেন শুরুতে কিছুটা কমে গেলেও এখন মোটামুটি লাভের দেখা পাচ্ছি। গত ডিসেম্বর মাসে বিদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে টাকা (রেমিট্যান্স) এসেছে। এখন সব খরচ দিয়ে মাসে ৮০ হাজার টাকার মতো মুনাফা থাকছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ভালো মুনাফার দিকে যেতে পারব।’
আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ bankbimabd এ লাইক দিন
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১