দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) পাঠালে আগের চেয়ে বেশি হারে নগদ প্রণোদনা পাওয়া যাবে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে অর্থ পাঠালে এত দিন দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতেন। আজ শনিবার থেকে তাঁরা এ প্রণোদনা পাবেন দুই দশমিক পাঁচ, অর্থাৎ আড়াই শতাংশ হারে। অর্থ মন্ত্রণালয় আজ শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। বলা হয়েছে, আজ থেকেই এ সিদ্ধান্ত কার্যকর।
বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে আনার ব্যাপারে উৎসাহিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। আরও বলা হয়, মানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের গুরুত্ব আছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ আজ শনিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে, অর্থাৎ নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করতে চিঠি পাঠিয়েছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই সরকার এই প্রথম প্রবাসী আয়ের বিপরীতে ২ শতাংশ প্রণোদনা বা নগদ সহায়তার ঘোষণা দেয়। এই সিদ্ধান্তের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি।
ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয় আসে ২ হাজার ৪৮০ কোটি ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ৩৬ শতাংশ বেশি।
আজ এই প্রণোদনার হার বৃদ্ধির বিষয়টি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নববর্ষের উপহার বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশি মুদ্রায় বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ২ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে)। এদিকে বিদায়ী অর্থবছরে পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে মোট আয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ রপ্তানি আয়ের পরই রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ।
শুধু বাংলাদেশে নয়, ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই প্রবাসী আয় বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। এ নিয়ে ১৩ জুলাই একটি মতামত প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। এতে ছয়টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হচ্ছে প্রবাসীদের সঞ্চয় দেশে পাঠানোর প্রবণতা বৃদ্ধি, বৈধ পথে দেশে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধি, দেশে থাকা পরিবারের প্রতি সহানুভূতিশীলতা, অর্থ প্রেরণের নতুন নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন, কর ছাড় ও বড় দেশের প্রণোদনার অর্থের কিছু অংশ দেশে আসা।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় বহু শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। নিজেদের সব সঞ্চয় দেশে নিয়ে এসেছেন তাঁরা। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে অনেক প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরতে পারেননি। ফলে বৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠান তাঁরা। করোনাকালে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলো নানা ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে। সেই অর্থের কিছুটা প্রবাসী শ্রমিকেরাও পেয়েছেন, যা তাঁরা দেশে নিজেদের পরিবারের কাছে পাঠিয়েছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ নভেম্বর মাসে বাংলাদেশকে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ’ সম্পর্কিত চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে। বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করবে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অনুষ্ঠিত আজ এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী থাকার সময় নিজে গবেষণা করে দেখেছেন ৪৯ শতাংশ প্রবাসী আয় আসে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে। বাকি ৫১ শতাংশ আসে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে। আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাসী আয় বাড়াতে তাই ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ২ শতাংশ প্রণোদনা দেওয়া শুরু করা হয়। এতে ফল পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরে দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় আসবে বলে তিনি আশাবাদী।
অফিস : দক্ষিণ বনস্রী, ঢাকা। ই-মেইলঃ bankbimabd@gmail.com, editor.bankbimabd@gmail.com
ফোন: +৮৮০১৭১৮৬২১৫৯১